Sunday, July 20, 2014
Thursday, July 17, 2014
Tuesday, July 15, 2014
Friday, July 4, 2014
Thursday, July 3, 2014
আমাদের লক্ষ্য
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আমাদের লক্ষ্যঃ
আমাদের সাধ্যানিযায়ী সমাজের নির্যাতীত, নিপীড়িত, এতিম, বিধবা, অক্ষম, প্রতিবন্ধী ও দুঃস্থদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে তাদেঁরকে কর্মক্ষম, দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
উদ্দেশ্যঃ
১. সাধ্যানুযায়ী গরীব
দুঃখী মানুষের চিকিৎসা সেবা
নিশ্চিত করা।
২. মেধাবী গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের
শিক্ষাবৃত্তি প্রদান।
৩. দরিদ্র ছেলে-মেয়েদের কারিগরী শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
৪. গরীব মানুষদের বিনামূল্যে কাফনের কাপড় বিতরণ।
৫. যুব সমাজকে দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ করা।
৬. সমাজে শিক্ষিতের হার বৃদ্ধির জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সুশিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৭. দুঃস্থ ও অক্ষম পরিবারকে সহায়তা প্রদান।
৮. এতিমখানা, মসজিদ, মাদ্রাসা ও স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সাধ্যনুয়ায়ী সহায়তা প্রদান।
৯. ঈদে দুঃস্থ মুসলীম পুরুষ
ও মহিলাদের মাঝে সাধ্যনুযায়ী নূতুন কাপড়, সেমাই, চিনি ইত্যাদি বিতরণ।
১০. জাতি, গোত্র, বর্ণ নির্বিশেষে সকল দুঃস্থ ও অভাবী
লোকদের আর্থিকসহ বিভিন্ন প্রকার সহায়তা প্রদান।
১১. গরীবদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ।
সদস্যদের নিয়মকানুনঃ
১. প্রত্যেক সদস্যকে ইসলামের সহীহ আক্বীদা ও বিশ্বাসী হতে হবে।
২. প্রত্যেক সদস্যদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৫টি কুরআনের আয়াত বাংলা
অর্থসহ পড়তে
হবে।
৩. কোন ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত
থাকা যাবে
না।
৪. দেশদ্রোহী কোন কর্মকান্ড করা
যাবে না।
৫. স্বদেশের প্রতি পূর্ণ ভালবাসা ও শ্রদ্ধা থাকতে হবে।
৬. সবসময় গরীব দুঃখী মানুষের পাঁশে দাঁড়ানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুক রাখতে
হবে।
৬. কাহারোও সাথে মনোমালিন্য বা
তর্কে লিপ্ত
হওয়া এবং
গীবত করা
থেকে বিরত
থাকতে হবে।
ক্ষমতায়ন নীতিমালা:
১. ফাউন্ডেশনের সকল সদস্যদের পরামর্শক্রমে চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান
এবং এডভাইজারগণ ফাউন্ডেশনের উন্নয়নের জন্য যেকোন
সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
২. চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যানের
এবং এডভাজারগণের অজান্তে বা
অনুমতি ব্যতিরেকে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে
না।
৩. চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান এবং
এডভাইজারগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে গন্য
হবে।
৪. ফাউন্ডেশনের সাথে
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যদি কোন
দোষ প্রমানীত হয় বা
দুর্নীতির দায়ে
দোষী হয়, তাহলে সকলের
পরামর্শক্রমে চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান-এর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে
গন্য হবে। এবং উনারা যেকোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে
পারবেন।
তবে শর্ত থাকে যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের প্রেসিডেন্ট
নিজে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে
পারবেন। যথাঃ
ক) তাৎক্ষনিকে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ ৩০০০
টাকা পর্যন্ত তার সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
খ) ছোট খাট তাৎক্ষনিক বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে তার
সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে
গন্য হবে।
সহায়তা
প্রাপ্তির যোগ্যতাসমুহঃ
v
যেসব লোকদের দৈনিক
আয় সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা
বা তার
কম।
v
গরীব মেধাবি ছাত্র-ছাত্রী।
v
এতিম, যাদের ভরণ-পোষনের ব্যবস্থা নেই।
v
বিধবা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, যাদের কোন
আয় নেই।
v
দুঃস্থ গরীব মানুষ, যাদের চিকিৎসার সামর্থ্য নেই।
v
অক্ষম বা অচল ব্যক্তি (যেমনঃ অন্ধ, প্রতিবন্দী
ইত্যাদি)।
নারীর ইসলামী শিক্ষার ব্যবস্থাকরণ
[ বাংলা – Bengali – بنغالي ]
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
2014 - 1435
تعليم الإسلام للمرأة
« باللغة البنغالية »
عبد الله المأمون
مراجعة: د/
أبو بكر محمد زكريا
2014 - 1435
নারীর ইসলামী
শিক্ষার ব্যবস্থাকরণ
আমাদের
দেশের নারী সমাজ ইসলামী শিক্ষা থেকে অনেকটা বঞ্চিত। একটি আদর্শ সমাজ গঠনের জন্য
প্রয়োজন একদল আদর্শ যুবক তৈরি করা, একদল আদর্শ যুবক তৈরি করতে হলে দরকার একদল
আদর্শ শিশু তৈরি করা। আর একদল আদর্শ শিশু তৈরি করতে হলে আগে তৈরি করতে হবে একদল
ইসলামী শিক্ষা সম্পন্ন আদর্শবতী মা। একজন শিক্ষিতা ও আদর্শবতী “মা” ই পারেন একটি
শিক্ষিত ও আদর্শ সমাজ উপহার দিতে।
কিন্তু আমাদের দেশের মায়েরা ইসলামী শিক্ষা গ্রহণে কতটুকু
সুযোগ-সুবিধা পায়? হাদীসে এসেছে:
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ
عَلَى الفِطْرَةِ، فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ، أَوْ يُنَصِّرَانِهِ، أَوْ يُمَجِّسَانِهِ»
“প্রত্যেক শিশু ইসলামের (মুসলিম হয়ে) উপর জন্ম গ্রহণ করে, অতঃপর
তার বাবা-মা তাকে ইহুদি, নাসারা বা মুর্তিপূজক বানায়” (বুখারী ও মুসলিম)। এ হাদীস
থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, শিশুদের প্রতিপালনের ক্ষেত্রে মা-বাবার কতটুকু
ভূমিকা রয়েছে। পারিবারিকভাবে শিশুকে ইসলামের আদর্শ ছোটবেলায় শিক্ষা দিলে সে বড় হয়ে
এ আদর্শই প্রতিপালন করবে।
তাছাড়া ইসলামের বিধিবিধান যথাযথভাবে বুঝা, তার নিজের ও
অপরের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া, বিশ্ববাসীর প্রতি ইতিবাচক চিন্তা চেতনা,
সৃজনশীল কিছু আবিষ্কার করা, পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা
সর্বোপরি নিজের সংসার উন্নতিকল্পে সর্বক্ষেত্রে নারীর ইসলামী শিক্ষার বিকল্প নেই।
নারীর কতটুকু ইসলামী জ্ঞান থাকা প্রয়োজন?
নারীর কর্মপরিধি অনুযায়ী তার ইসলামী জ্ঞানের পরিমাণ
নির্ধারণ করা হবে। হাদীসে এসেছে:
عن عَبْد اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ،
الإِمَامُ رَاعٍ وَمَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ فِي أَهْلِهِ وَهُوَ
مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ فِي بَيْتِ زَوْجِهَا وَمَسْئُولَةٌ
عَنْ رَعِيَّتِهَا، وَالخَادِمُ رَاعٍ فِي مَالِ سَيِّدِهِ وَمَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ»
قَالَ: - وَحَسِبْتُ أَنْ قَدْ قَالَ - «وَالرَّجُلُ رَاعٍ فِي مَالِ أَبِيهِ وَمَسْئُولٌ
عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَمَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ»
ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল (রক্ষণাবেক্ষণকারী), আর
তোমাদের দায়িত্ব অনুযায়ী জবাবদিহি করতে হবে। ইমাম (রাষ্ট্রের নেতা, কর্মকর্তা ও
মসজিদের ইমাম) একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি; তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
করা হবে। পুরুষ তার পরিবারবর্গের অভিভাবক, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
করা হবে। নারী তার স্বামী-গৃহের কর্ত্রী, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
করা হবে। খাদেম তার মনিবের ধন-সম্পদের রক্ষক, তাকে তার মনিবের ধন-সম্পদ সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করা হবে”।
ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেন: আমার মনে হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন: “পুত্র তার পিতার ধন-সম্পদের রক্ষক এবং এগুলো
সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। তোমরা সবাই রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং সবাইকে তাদের
অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে” (বুখারী ও মুসলিম)।
এ হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা
যায় যে, যে নারী যত বড় দায়িত্বশীল তার ইসলামী জ্ঞানের পরিধিও ততবেশী প্রয়োজন।
স্বাভাবিকভাবে যে সব নারীরা নিজ গৃহের দায়িত্বশীলা তাকে গৃহ পরিচালনা, সন্তান
সন্ততি, স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য, অন্যের প্রতি দায়িত্ব ও অধিকার,
প্রাত্যহিক জীবনে চলার জন্য যে সব অর্পিত ইবাদত (যেমন: পবিত্রতা, নামায, রোযা
প্রভৃতি) আছে ইত্যাদি সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান থাকা ফরয।
আর কোনো নারী যদি চাকুরী বা
ব্যবসা করে তবে তাকে উপরোক্ত জ্ঞানের পাশাপাশি এ সংক্রান্ত ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা
ফরয। আবার কেউ যদি সমাজের দায়িত্বশীল হন, তবে তাকে জনগণের অধিকার ও ইসলামে
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জ্ঞান থাকাও ফরয।
আমরা
নারীর ইসলামী শিক্ষা প্রসারে নিচের কয়েকটি ধাপে এগিয়ে যেতে পারি:
এক. নারীদেরকে জুম‘আর নামাজের প্রতি উদ্বুদ্ধকরণ:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মহিলারা
মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করতেন। খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগেও তারা মসজিদে
গিয়ে নামাজ পড়তেন, বিশেষ করে জুম‘আর নামায। কিন্তু পরবর্তী যুগে ফেতনা ফাসাদ বেড়ে
যাওয়ায় যুগের চাহিদানুসারে উলামায়ে কিরাম মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন;
কেউ কেউ এটাকে হারাম বলেছেন, কেউ এটাকে জায়েয বলেছেন, আবার কেউ মসজিদে না
যাওয়াটাকে উত্তম বলেছেন। তাই আমি নিচে উলামা কিরামের মতামত প্রথমে উল্লেখ করব এবং
তারা কি কি কারণে নিষেধ করেছেন? বর্তমানে মহিলাদেরকে মসজিদমুখী করা কতটুকু প্রয়োজন
এবং এর হুকুম কি? কি কি শর্তসাপেক্ষে মহিলারা মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করতে পারবেন?
বিশেষ করে জুম‘আর নামায।
যারা হারাম বলেছেন তাদের দলীল:
বুখারী ও আবু দাউদে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: «لَوْ أَدْرَكَ رَسُولُ اللَّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا أَحْدَثَ النِّسَاءُ لَمَنَعَهُنَّ كَمَا مُنِعَتْ
نِسَاءُ بَنِي إِسْرَائِيلَ»
“যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বর্তমান) নারীদের অবস্থা
দেখতেন, তবে তিনি তাদেরকে মসজিদে গিয়ে নামায পড়তে নিষেধ করতেন, যেমনিভাবে বনী
ইসরাইলদের নারীদেরকে মসজিদে যেতে বারণ করা হয়েছিল”। (বুখারী ও আবু দাউদ)
আবু দাউদে আব্দুল্লাহ ইবন
মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ:
«صَلَاةُ الْمَرْأَةِ فِي بَيْتِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِهَا فِي حُجْرَتِهَا، وَصَلَاتُهَا
فِي مَخْدَعِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِهَا فِي بَيْتِهَا»
“মহিলাদের ঘরে নামায আদায় করা বৈঠকখানায় নামায আদায় করার চাইতে
উত্তম এবং মহিলাদের সাধারণ থাকার ঘরে নামায আদায় করার চেয়ে গোপন প্রকোষ্ঠে নামায
আদায় করা অধিক উত্তম”।
যারা জায়েয বলেছেন তাদের দলীল:
ইবন ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: كَانَتِ امْرَأَةٌ لِعُمَرَ تَشْهَدُ صَلاَةَ الصُّبْحِ
وَالعِشَاءِ فِي الجَمَاعَةِ فِي المَسْجِدِ، فَقِيلَ لَهَا: لِمَ تَخْرُجِينَ وَقَدْ
تَعْلَمِينَ أَنَّ عُمَرَ يَكْرَهُ ذَلِكَ وَيَغَارُ؟ قَالَتْ: وَمَا يَمْنَعُهُ أَنْ
يَنْهَانِي؟ قَالَ: يَمْنَعُهُ قَوْلُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
«لاَ تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللَّهِ مَسَاجِدَ اللَّهِ»
‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর স্ত্রী (আতিকাহ বিনতে যায়িদ) ফজর ও ইশার
নামাযের জামা’আতে মসজিদে যেতেন। তাঁকে বলা হল, আপনি কেন (সালাতের জন্য মসজিদে) বের
হন? অথচ আপনি জানেন যে, উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এটা অপছন্দ করেন এবং মর্যাদাহানিকর
মনে করেন। তিনি জবাব দিলেন, তাহলে এমন কি বাধা রয়েছে যে, উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
আমাকে স্বয়ং নিষেধ করছেন না? তিনি বললেন, তাঁকে বাধা দেয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর বাণী: “আল্লাহর দাসীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে নিষেধ করো
না”। (বুখারী ও মুসলিম)
আবু দাউদে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
قَالَ: «لَا تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللَّهِ مَسَاجِدَ اللَّهِ، وَلَكِنْ لِيَخْرُجْنَ
وَهُنَّ تَفِلَاتٌ»
“তোমরা আল্লাহর দাসীদের
আল্লাহর মসজিদে যেতে নিষেধ করো না, তারা যেন সুগন্ধি ছাড়া বের হয়”।
কি কি কারণে না জায়েয বলেছেন? ও তার প্রতিকার:
প্রথমত: নারীদের মসজিদে যাওয়া ফেতনা
ফাসাদের কারণ হতে পারে। তবে পূর্ণ পর্দা সহকারে আলাদা স্থানে নামায পড়লে এটার
সম্ভাবনা থাকেনা।
দ্বিতীয়ত: নারীরা সাজসজ্জায়
অভ্যস্ত। যা পুরুষদেরকে আকৃষ্ট করতে পারে। এ সমস্যার সমাধানকল্পে স্বয়ং উপরোক্ত
হাদিসেই এসেছে যে, “তারা যদি মসজিদে যায় তবে যেন সুগন্ধি ব্যবহার না করে”। এখানে
সুগন্ধি দ্বারা সব ধরনের সাজ-সজ্জাকে মসজিদে যাওয়ার সময় নিষেধ করা হয়েছে।
মোদ্দাকথা, এখানে আমি
মহিলাদেরকে মসজিদে জামাতে নামায আদায় করাকে উত্তম বা অনুত্তম বলছি না। কেননা এটা
জায়েয বিষয়, হারাম বলাটা ঠিক হবেনা। তবে আমার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের যদি জুম‘আর
নামায ও অন্যান্য বিশেষ প্রয়োজনে মসজিদে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা থাকত, তবে ইসলামী
শিক্ষা থেকে তারা এতটা দূরে থাকত না। তাদের ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টা
লক্ষ্য রেখে তাদেরকে মসজিদ-মুখী করা দরকার।
কি কি শর্তসাপেক্ষে মহিলারা মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করতে পারবেন?
১. মসজিদে মহিলাদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা নামাযের জায়গা থাকতে হবে ও আলাদা
দরজা থাকতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ تَرَكْنَا هَذَا الْبَابَ
لِلنِّسَاءِ» قَالَ نَافِعٌ: فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ ابْنُ عُمَرَ حَتَّى مَاتَ
“যদি এই দরজাটি কেবলমাত্র মহিলাদের প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট করা হত (তবে
উত্তমই হত)। নাফে’ রহ. বলেনঃ অতঃপর ইবন ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উক্ত দরজা দিয়ে তাঁর মৃত্যুর
পূর্ব পর্যন্ত কোনোদিন প্রবেশ করেন নি।
অন্য রেওয়ায়েতে, ইবন ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর পরিবর্তে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কথা বলা
হয়েছে। (আবু দাউদ)
২. মহিলারা পূর্ণ পর্দা সহকারে মসজিদে আসতে হবে ও উচ্চস্বরে কথা বলা যাবে না।
সুগন্ধি থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَا تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللَّهِ
مَسَاجِدَ اللَّهِ، وَلَكِنْ لِيَخْرُجْنَ وَهُنَّ تَفِلَاتٌ»
“তোমরা আল্লাহর দাসীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে নিষেধ করো না, তারা যেন
সুগন্ধি ছাড়া বের হয়”।
৩. মহিলারা অভিভাবক বা স্বামীর অনুমতিক্রমে আসবে, তারা কোন যৌক্তিক কারণে
নিষেধ করলে আসা যাবেনা ও একা একা না আসাই উত্তম।
৪. রাতের বেলায় মসজিদে না আসাই শ্রেয়, তবে ফেতনার ভয় না থাকলে কোনো অসুবিধা
নেই।
দুই. মসজিদে বা বাড়িতে নারীদের জন্যে আলাদা হালকার ব্যবস্থা করা:
যে সব মসজিদে বা বাড়িতে নারীদের বসার আলাদা জায়গা রয়েছে সে সব মসজিদে বা বাড়িতে
তাদের জন্য মাঝে মধ্যে আলাদা আলোচনার ব্যবস্থা করা উচিত। এসব বিশেষ সভায় নারীদের
একান্ত প্রয়োজনীয় মাস’আলা মাসায়েল আলোচনা করা প্রয়োজন। ইমাম সাহেবের স্ত্রী বা
নিকটাত্মীয় মহিলা যদি ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হন তবে তাদের দ্বারা এসব আলোচনা সভার
আয়োজন করা উত্তম। আর যদি এ ব্যবস্থা না থাকে তবে ইমাম সাহেব মসজিদ কমিটির সাথে
আলোচনা করে কিছু বয়স্ক মুরুব্বী মুসল্লিদের সহযোগীতায় এ ধরনের সভার আয়োজন করতে
পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে এটা যেন কোনো ফেতনা ফাসাদের রূপ ধারণ না করে।
তিন. মসজিদে মক্তব ব্যবস্থা আবার চালু করা:
প্রাচীনকাল থেকে আমাদের দেশে সকালে মসজিদে মসজিদে ইসলামী
শিক্ষা বাস্তবায়নে মক্তব ব্যবস্থা চালু ছিল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে,
বর্তমান যুগে তা আর চোখে পড়ে না। শিশুদেরকে ছোট বেলায় কালেমা, নামায, রোযা, উত্তম
চরিত্র ইত্যাদি ইসলামী শিক্ষা মক্তব থেকেই শিক্ষা দেয়া হয়। তাই তো ইসলামী
ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সারা দেশে মসজিদ ভিত্তিক মক্তব ব্যবস্থা চালু করছে। আমাদের
সাধ্যানুযায়ী এ বিশেষ ফলপ্রসূ ব্যবস্থাটিকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
চার. আধুনিক ও মানসম্মত মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা:
আমাদের দেশে বর্তমানে কিছু কিছু মহিলা মাদ্রাসা
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু এ গুলো মানের বিচারে এখনও পিছিয়ে আছে। ইসলামী শিক্ষার
পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষা ছাড়া বর্তমানে মানসম্মত প্রতিষ্ঠান কল্পনা করা যায়না।
উদাহরণস্বরূপ আমরা বিশ্ববিখ্যাত আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা শাখার কথা বলতে
পারি। সেখানে মেয়েদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা পরিবেশে ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষার
সমন্বয়ে (ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারী ও অন্যান্য শিক্ষা সহ) নার্সারি থেকে পি,এইচ,ডি পর্যন্ত শিক্ষা
ব্যবস্থা রয়েছে। সেখান থেকে মিশরের ও মুসলিম বিশ্বের নারীরা শিক্ষা গ্রহণ করে
সমাজের সর্বস্তরে সেবা দান করছে।
পাঁচ. প্রচলিত সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী শিক্ষাকে জোরদার করা:
আমাদের দেশে প্রচলিত সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় ইতিপূর্বে
ইসলামী শিক্ষাকে গুরুত্বের সাথে পড়ানো হত। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বর্তমানে
এ বিষয়টিকে অনেকটা অবহেলার ছলে পড়ানো হয়, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খুবই
হুমকিস্বরূপ হয়ে দাড়াবে। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণ শিক্ষার
পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষাকে গুরুত্বের সাথে পড়ানো হলে আজ নারীরা ইসলামী জ্ঞান থেকে
এতটা দূরে থাকত না। বর্তমান সংস্কারকৃত শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী শিক্ষাকে যেভাবে
উপেক্ষা করা হয়েছে ভবিষ্যতে মানুষ আল্লাহ-রাসুলকে চিনবে কিনা তা বলা দুস্কর। মনে
রাখতে হবে ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া আদর্শ মানুষ গঠন করা সম্ভব নয়।
ছয়. হক্কানি ওলামায়ে কিরামদের ওয়াজ মাহফিল শোনা ও যাওয়া:
কুরআনে এসেছে:
﴿ وَذَكِّرۡ فَإِنَّ ٱلذِّكۡرَىٰ تَنفَعُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٥٥ ﴾ [الذاريات: ٥٥]
“আপনি তাদেরকে উপদেশ স্মরণ করে দিন (বোঝাতে থাকেন), কেননা উপদেশ স্মরণ করে
দেওয়া মু’মিনদের উপকারে আসবে”। [সূরা আয-যারিয়াত:৫৫]
তাই উলামা কিরামদের ওয়াজ মাহফিল শোনা খুবই দরকার। এতে মানুষের মন নরম হয় ও
ভালো কাজের প্রতি আগ্রহী হয়। বর্তমানে ঘরে বসে রেডিও, টেলিভিশন, ভি সি ডি, ও
ইন্টারনেট থেকে এ সব আলোচনা শোনা একদম সহজ। গান-বাজনা ও সিনেমা দেখে নিজের আমলনামা
ভারী না করে এ সব ইসলামী আলোচনা শুনে নিজেকে পরকালের জন্য তৈরি করাই বুদ্ধিমানের
কাজ।
সাত. বাংলায় বেশী বেশী ইসলামী বই পড়া:
শিখতে হলে পড়তে হবে। বইই হলো মানুষের পরম বন্ধু। তাই
বাংলায় ইসলামী বই পড়ে নিজেদের জ্ঞান গরিমা বৃদ্ধি করা প্রত্যেকটি নারী পুরুষের
কর্তব্য। তবে বই নির্ধারনের ক্ষেত্রে একজন ভালো হক্কানি আলেমের পরামর্শ নেওয়া
ভালো। কেননা অল্প শিক্ষিত মানুষের জন্য সব ধরনের বই পড়া সমুচিন নয়। বিশুদ্ধ
আক্বিদা ও সহীহ হাদীস নির্ভর বই পুস্তক পড়া উচিত। যে সব কিতাব ফেতনা ফাসাদ ছড়ায় তা
বিশেষজ্ঞ আলেম ছাড়া অন্যরা না পড়াই শ্রেয়। তাছাড়া যে সব কিতাব অধিকাংশ জাল ও
দুর্বল হাদীস নির্ভর তা থেকে সাধারণ মানুষের বিরত থাকাই উত্তম। কেননা সে হয়ত কোনটা
সঠিক আর কোনটা ভুল তা নির্ণয় করতে পারবে না।
আট. সর্বোপরি দ্বীনদার আলেম পাত্র-পাত্রীর সাথে ছেলে মেয়ের বিবাহ দেওয়া:
জামে তিরমিযীতে আবু হাতেম আল মুযানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
عَنْ أَبِي حَاتِمٍ الْمُزَنِيِّ
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا جَاءَكُمْ مَنْ
تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَأَنْكِحُوهُ، إِلاَّ تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي
الأَرْضِ وَفَسَادٌ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَإِنْ كَانَ فِيهِ؟ قَالَ: إِذَا
جَاءَكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَأَنْكِحُوهُ، ثَلاَثَ مَرَّاتٍ.
“যখন তোমাদের নিকট এমন পাত্র আসবে যার দ্বীনদারীতা ও চরিত্রের ব্যাপারে
তোমরা সন্তষ্ট হবে, তবে তাঁর সাথে তোমাদের কন্যাকে বিবাহ দাও। আর যদি তোমরা তা না
কর, তবে জমিনে ফেতনা ফাসাদ ছড়িয়ে পড়বে”।
একজন আলেমের নিকট মেয়ের বিবাহ হলে সেও তার ইসলামী জ্ঞান থেকে একটু একটু করে
শিখতে পারবে। আলেমের সাহচর্যে থেকে তার পরিবারটি ইসলামী আলোয় জ্বলে উঠবে আর আগত
শিশুটি একটি ইসলামী পরিবেশে বেড়ে উঠে আদর্শবান হবে।
পরিশেষে বলব যে, ইসলামই
হচ্ছে মানবতার একমাত্র শান্তির মডেল। পূর্ণ ইসলামী বিধি-বিধান চর্চাই হচ্ছে
মু’মিনের একমাত্র লক্ষ্য। পার্থিব জীবনের সামান্য ভোগবিলাসের জন্য অনন্ত জীবনের
পাথেয় সংগ্রহ করা থেকে ভুলে থাকা জ্ঞানীর কাজ নয়। নিজে সত্যিকারের মুসলিম হই ও
পরিবারকে এ পথে আনার আপ্রান চেষ্টা করি। আল্লাহ পাক আমাদেরকে কবুল করুন। আমীন।
Subscribe to:
Comments (Atom)















