দোয়া করতে আল্লাহর নির্দেশ
পবিত্র কোরআনে দোয়া
মহান
আল্লাহ্ তায়ালা মানব
জাতিকে হেদায়াত করার
জন্য পবিত্র কোরআন
নাযিল করেছেন। এতে
একদিকে যেমন তিনি
স্রষ্টার অস্তিত্ব ও
একত্ব, সৃষ্টি ও
সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন
তেমনি ইবাদতের পদ্ধতি,
মানুষের জন্য কল্যাণকর ও
অকল্যাণকর বিষয়সমূহ, মানুষের ভুল-ভ্রান্তি, পাপ-অনুতাপ, পুরস্কার-প্রতিদান ইত্যাদি বিষয়
সম্পর্কেও উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ্র
সন্তুষ্টি অর্জন অথবা
ভুল-ত্রুটি মার্জনা, অথবা
বিপদাপদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার
জন্য কীভাবে তাঁকে
ডাকতে হবে সে
সম্পর্কে কোরআনে দিক
নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নবী-রাসূল (আঃ)
ও মুমিন বান্দারা কীভাবে
মহান আল্লাহ্র
কাছে দোয়া করতেন,
তাঁর কাছে কী
কী বিষয় প্রার্থনা করতেন
পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে
সেসব বর্ণিত হয়েছে।
নিচে এসব আয়াতের
মধ্য থেকে কয়েকটি
উল্লেখ করা হলো।
মহান আল্লাহ্র কাছে দোয়া করা সংক্রান্ত আয়াত :
আল্লাহ্ তায়ালা
পবিত্র কোরআনে তাঁর
কাছে দোয়া করতে
বলেছেন। কোরআনের সূরা
মুমিন-এর ৬০
নং আয়াতে মহান
আল্লাহ্ বলছেন :
...ادْعُوْنِيْ أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِيْنَ
يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَنَنَّمَ دَاخِرِيْنَ
‘...তোমরা
আমাকে ডাক, আমি
তোমাদের ডাকে সাড়া
দেব। যারা অহংকারবশে আমার
ইবাদতে বিমুখ, তারা
অবশ্যই লাঞ্ছিত হয়ে
জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’
দোয়া করার পদ্ধতি :
মহান আল্লাহ্ পবিত্র
কোরআনে মানুষকে তাঁর
নিকট দোয়া করার
পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন। তিনি
বলেন :
...فَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُوْلُ
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا وَ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ وَ
مِنْهُمْ مَن يَقُوْلُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَ فِي الْآخِرَةِ
حَسَنَةً وَ قِنَا عَذَابَ النَّارِ أُولئِكَ لَهُمْ نَصِيْبٌ مِمَّا كَسَبَوْا و اللهُ
سَرِيْعُ الْحِسَابِ
...‘মানুষের মধ্যে
যারা বলে, “হে
আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ইহকালেই দাও”,
বস্তুত পরকালে তাদের
জন্য কোন অংশ
নেই। আর তাদের
মধ্যে যারা বলে,
“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের
দুনিয়াতে কল্যাণ দাও
এবং আখিরাতে কল্যাণ
দাও এবং আমাদেরকে আগুনের
শাস্তি থেকে রক্ষা
কর”, তারা যা
অর্জন করেছে তার
প্রাপ্য অংশ তাদেরই। বস্তুত
আল্লাহ্ হিসাব গ্রহণে
অত্যন্ত তৎপর।’-(সূরা
বাকারা : ২০০-২০২)।
প্রার্থিত বিষয়
সরল পথ প্রদর্শন :
اَلْحَمْدُ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
الرَّحْمَانِ الرَّحِيْمِ مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَ إِيَّاكَ
نَسْتَعِيْنُ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ صِرَاطَ الَّذِيْنَ أَنْعَمْتَ
عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَ لَا الضَّالِّيْنَ
‘সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ্রই,
যিনি দয়াময়, পরম
দয়ালু, কর্মফল দিবসের
মালিক। আমরা শুধু
তোমারই ইবাদত করি,
শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি,
আমাদেরকে সরল পথ
প্রদর্শন কর, তাদের
পথ, যাদেরকে তুমি
অনুগ্রহ দান করেছ,
তাদের পথ নয়
যারা ক্রোধ-নিপতিত
ও পথভ্রষ্ট।’-(সূরা
ফাতিহা : ১-৭)
গুরু দায়িত্ব অর্পণ না করা :
...رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ
نَسِيْنَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَ لَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا
حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا
طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَ اغْفِرْلَنَا وَ ارْحَمْنَا أَنْتَ
مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
...‘হে আমাদের
প্রতিপালক যদি আমরা
বিস্মৃত হই অথবা
ভুল করি তবে
তুমি আমাদেরকে পাকড়াও
কর না। হে
আমাদের প্রতিপালক! আমাদের
পূর্ববর্তীদের
ওপর যেমন গুরুদায়িত্ব অর্পণ
করেছিলে আমাদের ওপর
তেমন দায়িত্ব অর্পণ
কর না। হে
আমাদের প্রতিপালক! এমন
ভার আমাদের ওপর
অর্পণ কর না
যা বহন করার
শক্তি আমাদের নেই।
আমাদের পাপ মোচন
কর, আমাদের ক্ষমা
কর, আমাদের প্রতি
দয়া কর, তুমিই
আমাদের অভিভাবক। সুতরাং
কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের
সাহায্য কর।’ (সূরা
বাকারা : ২৮৬)
অন্তরকে সত্য পথে দৃঢ় রাখার জন্য :
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَ
هَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ
‘হে
আমাদের প্রতিপালক! সরল
পথ প্রদর্শনের পর
তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য
লঙ্ঘনপ্রবণ কর না
এবং তোমার নিকট
হতে আমাদেরকে করুণা
দাও, নিশ্চয়ই তুমি
মহাদাতা।’ (সূরা আলে
ইমরান : ৮)
বাবা-মার জন্য প্রার্থনা :
...رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْراً
...‘হে
আমার প্রতিপালক! তাদের
প্রতি দয়া কর
যেভাবে শৈশবে তারা
আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।’-(সূরা
বনী ইসরাঈল : ২৪)
কল্যাণ কামনা :
...رَبِّ ادْخِلْنِيْ مُدْخَلَ صِدْقٍ وَ أَخْرِجْنِيْ
مُخْرَجَ صِدْقٍ وَ اجْعَلْ لِيْ مِنْ لَدُنْكَ سُلْطَاناً نَصِيْراً
...‘হে
আমার প্রতিপালক! আমাকে
প্রবেশ করাও কল্যাণের সাথে
এবং আমাকে নিষ্ক্রান্ত করাও
কল্যাণের সাথে এবং
তোমার নিকট হতে
আমাকে দান কর
সাহায্যকারী শক্তি।’-(সূরা
বনী ইসরাঈল : ৮০)
জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য দোয়া :
...رَبِّ زِدْنِيْ عِلْماً
...‘হে
আমার প্রতিপালক! আমাকে
জ্ঞানে সমৃদ্ধ কর।’-(সূরা তা-হা : ১১৪)
শয়তানের প্ররোচনা হতে আশ্রয় কামনা :
...رَبِّ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ وَ
أَعُوْذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُوْنِ
...‘হে
আমার প্রতিপালক! আমি
তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি
শয়তানের প্ররোচনা হতে,
হে আমার প্রতিপালক! আমি
তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি
আমার নিকট তাদের
উপস্থিতি হতে।’-(সূরা
মু’মিনূন :৯৭-৯৮)
ক্ষমা প্রার্থনা :
...رَبِّ اغْفِرْ وَ ارْحَمْ وَ أَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
...‘হে
আমার প্রতিপালক! ক্ষমা
কর ও দয়া
কর, তুমিই তো
সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’-(সূরা
মু’মিনূন : ১১৮)
স্ত্রী-সন্তান কামনা :
...رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَ ذُرِّيَّتِنَا
قُرَّةَ أَعْيُنِ وَ اجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِيْنَ إِمَاماً
...‘হে
আমাদের প্রতিপালক! আমাদের
জন্য এমন স্ত্রী
ও সন্তান-সন্ততি
দান কর যারা
হবে আমাদের জন্য
নয়নপ্রীতিকর এবং আমাদেরকে কর
মুত্তাকীদের জন্য অনুসরণযোগ্য।-(সূরা
ফুরকান : ৭৪)
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারার সামর্থ্য কামনা :
...رَبِّ أَوْزْعْنِيْ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِيْ
أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَ عَلَى وَالِدَيَّ وَ أَنْ أَعْمَلَ صَالِحاً تَرْضَاهُ وَ
أَصْلِحْ لِيْ فِيْ ذُرِّيَّتِيْ إِنِّيْ تُبْتُ إِلَيْكَ وَ إِنِّيْ مَنَ
الْمُسْلِمِيْنَ
...‘হে
আমার প্রতিপালক! তুমি
আমাকে সামর্থ্য দাও,
যাতে আমি তোমার
প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করতে পারি, আমার
প্রতি ও আমার
পিতা-মাতার প্রতি
তুমি যে অনুগ্রহ করেছ,
তার জন্য এবং
যাতে আমি সৎকাজ
করতে পারি যা
তুমি পছন্দ কর;
আমার জন্য আমার
সন্তান-সন্ততিদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর,
আমি তোমারই অভিমুখী হয়েছি
এবং আমি অবশ্যই
আত্মসমর্পণকারীদের
অন্তর্ভুক্ত।’-(সূরা আহকাফ
: ১৫)
নবী-রাসূলগণের দোয়া :
নবী-রাসূলগণ মহান
আল্লাহ্র কাছে
বিভিন্ন বিষয়ে প্রার্থনা করতেন।
ধর্ম প্রচারে সাহায্য করার
জন্য, কখনো কাফিরদের বিরুদ্ধে সহযোগিতা কামনা
করে, কখনো নিজের
জন্য, কখনো পিতা-মাতা, কখনো
আবার বংশধরদের জন্য
নবী-রাসূলগণ প্রার্থনা করতেন।
নিচে এমনই কিছু
আয়াত উল্লেখ করা
হলো।
১. নিজেদের বংশধারায় নবী প্রেরণের জন্য মহান আল্লাহ্র কাছে হযরত ইবরাহীম (আ.) ও হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর দোয়া :
رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ
أَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ رَبَّنَا وَ اجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَ مِنْ
ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُسْلِمَةً لَكَ وَ أَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَ تُبْ عَلَيْنَا
إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ رَبَّنَا وَ ابْعَثْ فِيْهِمُ رَسُوْلاً
مِنْهُمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَ يُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَ الْحِكْمَةَ
وَ يُزَكِّيْهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
...‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে তোমার একান্ত অনুগত কর এবং আমাদের বংশধর হতে তোমার এক অনুগত উম্মত কর। আমাদের ইবাদতের নিয়ম-পদ্ধতি দেখিয়ে দাও এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হও। তুমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের মধ্য থেকে তাদের নিকট এক রাসূল প্রেরণ কর যে তোমার আয়াতসমূহ তাদের নিকট তেলাওয়াত করবে; তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবে এবং তাদেরকে পবিত্র করবে। তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’-(সূরা
বাকারা : ১২৬)
২. পবিত্র মক্কা নগরী ও এর মুমীন অধিবাসীদের জন্য হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর দোয়া :
رَبِّ اجْعَلْ هذَا بَلَداً آمِناً وَ
ارْزُقْ أَهْلَهُ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ آمَنَ مِنْهُمْ بِاللهِ وَ الْيَوْمِ
الْآخِرِ
ক.
...‘হে আমার প্রতিপালক! একে নিরাপদ শহর কর, আর এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ্ ও আখিরাতে ঈমান আনে তাদেরকে ফলমূল হতে জীবিকা প্রদান কর।'-(সূরা
বাকারা : ১২৬)
رَبِّ اجْعَلْ هذَا الْبَلَدَ آمِناً
وَ اجْنُبْنِيْ وَ بَنِيَّ أَنْ نَعْبُدَ الْأَصْنَامَ رَبِّ إِنَّهُنَّ
أَضْلَلْنَ كَثِيْراً مِنَ النَّاسِ فَمَنْ تَبِعَنِيْ فَإِنَّهُ مِنِّيْ وَ مَنْ
عَصَانِيْ فَإِنَّكَ غُفُوْرٌ رَحِيْمٌ رَبَّنَا إِنِّيْ أَسْكَنْتُ مِنَ
ذُرِّيَّتِيْ بِوَادٍ غَيْرِ ذِيْ زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا
لِيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ
وَ ارْزُقْهُمْ مِنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُوْنَ
খ.
...‘হে আমার প্রতিপালক! এ নগরীকে নিরাপদ কর এবং আমাকে ও আমার পুত্রদেরকে প্রতিমা পূজা থেকে দূরে রাখ। ‘হে আমার প্রতিপালক! এ সব প্রতিমা তো বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সেই আমার দলভুক্ত, কিন্তু কেউ আমার অবাধ্য হলে তুমি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে বসবাস করালাম অনুর্বর উপত্যকায় তোমার পবিত্র গৃহের নিকট, হে আমাদের প্রতিপালক! এজন্য যে, তারা যেন সালাত কায়েম করে। অতএব, তুমি কিছু লোকের অন্তর তাদের প্রতি অনুরাগী করে দাও এবং ফলাদি দ্বারা তাদের রিযিকের ব্যবস্থা কর, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।'-(সূরা
ইবরাহীম : ৩৫-৩৮)
৩. নিজের জন্য এবং পিতামাতা ও মুমিনদের জন্য ইবরাহীম (আ.)-এর দোয়া
...رَبَّنَا اغْفِرْلِيْ
وَلِوَالِدَيَّ وَ لِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
...‘হে আমার প্রতিপালক! যেদিন হিসাব অনুষ্ঠিত হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর।’-(সূরা
ইবরাহীম : ৪১)
হযরত ইবরাহীম (আ.) ও তাঁর অনুসারীদের দোয়া
...رَبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَ
إِلَيْكَ أَنَبْنَا وَ إِلَيْكَ الْمَصِيْرُ رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً
لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَ اغْفِرْلَنَا رَبَّنَا إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيْزُ
الْحَكِيْمُ
...‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমারই ওপর নির্ভর করেছি, তোমারই অভিমুখী হয়েছি এবং প্রত্যাবর্তন তো তোমারই নিকট। ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে কাফিরদের পীড়নের পাত্র কর না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের ক্ষমা কর; তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’-(সূরা মুমতাহিনা : ৪-৫)
৪. সীমা লঙ্ঘন ও কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নবী-রাসূলগণের দোয়া :
সম্মানিত নবী-রাসূলগণ সীমা লঙ্ঘন থেকে বেঁচে থাকার বিষয়ে এবং কাফিরদের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহ্র কাছে এভাবে দোয়া প্রার্থণা করতেন :
সম্মানিত নবী-রাসূলগণ সীমা লঙ্ঘন থেকে বেঁচে থাকার বিষয়ে এবং কাফিরদের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহ্র কাছে এভাবে দোয়া প্রার্থণা করতেন :
رَبَّنَا اغْفِرْلَنَا ذُنُوْبَنَا وَ
إِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَ ثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَ انْصُرْنَا عَلَى
الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
...‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পাপ এবং আমাদের কাজে সীমা লঙ্ঘন তুমি ক্ষমা কর, আমাদের পা সুদৃঢ় রাখ এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য কর।’-(সূরা
আলে ইমরান : ১৪৭)
৫. হযরত নূহ (আ.)-এর দোয়া
رَبِّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ أَنْ
أَسْئَلَكَ مَا لَيْسَ لِيْ بِهِ عُلْمٌ وَ إِلَّا تَغْفِرْلِيْ وَ تَرْحَمْنِيْ
أَكُنْ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
...‘হে আমার প্রতিপালক! যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে যাতে আপনাকে অনুরোধ না করি, এজন্য আমি আপনার শরণাপন্ন হচ্ছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন এবং আমাকে দয়া না করেন, তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’-(সূরা
হূদ : ৪৭)
৬. হযরত মূসা (আ.)-এর দোয়া :
ধর্ম প্রচারের কাজ সহজ করে দেয়া ও সহোদর ভাই হযরত হারূন (আ.)-কে ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে সহযোগী করে দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ্র কাছে মূসা (আ.) নিচের প্রার্থনাটি করেছিলেন :
ধর্ম প্রচারের কাজ সহজ করে দেয়া ও সহোদর ভাই হযরত হারূন (আ.)-কে ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে সহযোগী করে দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ্র কাছে মূসা (আ.) নিচের প্রার্থনাটি করেছিলেন :
...رَبِّ اشْرَحْ لِيْ صَدْرِيْ وَ
يَسِّرْلِيْ أَمْرِيْ وَ احْلُلْ عُقْدَةً مِنْ لِسَانِيْ يَفْقَهُوْا قَوْلِيْ وَ
اجْعَلْ لِيْ وَزِيْراً مِنْ أَهْلِيْ هَارُوْنَ أَخِيْ اشْدُدْ بِهِ أَزْرِيْ وَ
أَشْرِكْهُ فِيْ أَمْرِيْ
...‘হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দাও এবং আমার কাজ সহজ করে দাও। আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দাও যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। আমার জন্য আমার স্বজনদের মধ্য থেকে একজন সাহায্যকারী করে দাও আমার ভাই হারূনকে, তার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় কর ও তাকে আমার কাজে অংশী কর।’-(সূরা
তা-হা : ২৫-৩২)
৭. হযরত ইউনুস (আ.)-এর দোয়া :
মাছের পেটে থাকা অবস্থায় ইউনুস (আ.) এ দোয়া করেছিলেন :
মাছের পেটে থাকা অবস্থায় ইউনুস (আ.) এ দোয়া করেছিলেন :
...لَا إِلهَ إِلَّا أَنْتَ
سُبْحَانَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
...‘তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই; তুমি পবিত্র, মহান! আমি তো সীমা লঙ্ঘনকারী।’ (সূরা
আম্বিয়া : ৮৭)
মুমিন বান্দাদের দোয়া :
পবিত্র কোরআনে মুমিন বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনার পাশাপাশি তাদের দোয়া করার বিষয়টিও বর্ণিত হয়েছে। তাদের দোয়া হলো নিম্নরূপ :
পবিত্র কোরআনে মুমিন বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনার পাশাপাশি তাদের দোয়া করার বিষয়টিও বর্ণিত হয়েছে। তাদের দোয়া হলো নিম্নরূপ :
...رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ
نَسِيْنَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَ لَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا
حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا
طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَ اغْفِرْلَنَا وَ ارْحَمْنَا أَنْتَ
مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
...‘হে আমাদের প্রতিপালক যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি তবে তুমি আমাদেরকে পাকড়াও কর না। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পূর্ববর্তিদের ওপর যেমন গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছিলে আমাদের ওপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ কর না। হে আমাদের প্রতিপালক! এমন ভার আমাদের ওপর অর্পণ কর না যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপ মোচন কর, আমাদেরকে ক্ষমা কর, আমাদের প্রতি দয়া কর, তুমিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর।’-(সূরা
বাকারা : ২৮৬)
বোধশক্তিসম্পন্ন (জ্ঞানী) ব্যক্তিদের দোয়া :
পবিত্র কোরআনে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের দোয়া সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা বলে :
পবিত্র কোরআনে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের দোয়া সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা বলে :
...رَبَّنَا فَاغْفِرْلَنَا
ذُنُوْبَنَا وَ كَفِّرْ عَنَّا سَيِّآتِنَا وَ تَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
رَبَّنَا وَ آتِنَا مَا وَعَدْتَنَا عَلَى رُسُلِكَ وَ لَا تُخْزِنَا يَوْمَ
الْقِيَامَةِ إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيْعَادَ
১.
...‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের পাপ ক্ষমা কর, আমাদের মন্দ কাজগুলো দূরীভূত কর এবং আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের সহগামী করে মৃত্যু দিও। হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার রাসূলগণের মাধ্যমে আমাদেরকে যা দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছ তা আমাদেরকে দাও এবং কিয়ামতের দিন আমাদেরকে হেয় কর না। নিশ্চয়ই তুমি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম কর না।’-(সূরা
আলে ইমরান : ১৯১-১৯৪)
...رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْلَنَا
وَ ارْحَمْنَا وَ أَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
২.
...‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও দয়া কর, তুমি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (সূরা মুমিনূন : ১০৯)
...رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ
جَهَنَّمَ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَاماً
৩.
...‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি বিদূরিত কর, তার শাস্তি তো নিশ্চিত বিনাশ, নিশ্চয়ই তা অস্থায়ী ও স্থায়ী আবাস হিসাবে নিকৃষ্ট।'-(সূরা
ফুরকান : ৬৩-৬৬)
হযরত মূসা (আ.)-এর সময় যাদুকরদের দোয়া :
মূসা (আ.)-এর মোকাবিলায় ফিরআউন যাদুকরদের নিয়ে আসে। যাদুকররা মূসা (আ.)-এর মুজেযার কাছে পরাজিত হয়ে ঈমান আনে। এতে ফিরআউন ক্ষিপ্ত হয়ে যাদুকরদের হত্যা করার নির্দেশ দেয়। এরপরও যাদুকররা ঈমান ত্যাগ করেনি, বরং মহান আল্লাহ্র কাছে তাদের প্রার্থনা ছিল :
মূসা (আ.)-এর মোকাবিলায় ফিরআউন যাদুকরদের নিয়ে আসে। যাদুকররা মূসা (আ.)-এর মুজেযার কাছে পরাজিত হয়ে ঈমান আনে। এতে ফিরআউন ক্ষিপ্ত হয়ে যাদুকরদের হত্যা করার নির্দেশ দেয়। এরপরও যাদুকররা ঈমান ত্যাগ করেনি, বরং মহান আল্লাহ্র কাছে তাদের প্রার্থনা ছিল :
...رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا
صَبْراً وَ تَوَفَّنَا مُسْلِمِيْنَ
...‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্য দান কর এবং মুসলমানরূপে আমাদেরকে মৃত্যু দাও।’-(সূরা
আরাফ : ১২৬)
দোয়া সংক্রান্ত হাদীসসমূহ
মহানবী (সা.)-এর হাদীসসমূহে দোয়ার গুরুত্বঃ
۱. قَالَ النَّبِيُّ (ص) لَيْسَ
شَيْءٌ أَكْرَمَ عَلَى اللهِ مِنَ الدُّعَاءِ
১.
নবী (সা.) বলেন
: দোয়ার
চাইতে কোন জিনিস আল্লাহ্র কাছে অধিক সম্মানিত নয়।-জামে
আত তিরমিযী
۲. قَالَ النَّبِيُّ (ص) الدُّعَاءُ
مُخُّ الْعِبَادَةِ
২.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন : দোয়া হলো ইবাদতের মূল বা সার।-জামে
আত তিরমিযী
۳. عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ
عَنِ النَّبِيِّ (ص) قَالَ الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ ثُمَّ قَرَأَ (وَ قَالَ
رَبُّكُمُ ادْعُوْنِيْ أَسْتَجِبْلَكُمْ إِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ
عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ)
৩.
নোমান ইবনে বাশীর
(রা.) থেকে বর্ণিত। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন
: 'দোয়াই হলো ইবাদত।' অতঃপর তিনি তেলাওয়াত করেন (অনুবাদ) “এবং তোমাদের প্রভু বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। কেননা, যে সমস্ত লোক আমার ইবাদত থেকে অহংকার করে (বিরত থাকে), অচিরেই তারা লাঞ্ছনার সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”-(সূরা
মুমিন : ৬০)-জামে
আত তিরমিযী
۴. قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) إِنَّهُ
مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللهَ يَغْضَبُ عَلَيْهِ
৪.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি আল্লাহ্র নিকট চায় না, আল্লাহ্ তার ওপর অসন্তুষ্ট হন।-জামে আত
তিরমিযী
۵. قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) مَا مِنْ
أَحَدٍ يَدْعُوْ بِدُعَاءٍ إِلَّا أَتَاهُ اللهُ مَا سَأَلَ أَوْ كَفَّ عَنْهُ
مِنَ السُّوْءِ مِثْلَهُ مَا لَمْ يَدَعْ بِإِثْمِ أَوْ قَطِيْعَةِ رَحِمٍ
৫.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোন লোক (আল্লাহ্র নিকট) কোন কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাকে তা দান করেন অথবা তদনুপাতে তার থেকে কোন অমঙ্গল প্রতিহত করেন, যাবত না সে কোন পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য দোয়া করে।-জামে
আত তিরমিযী
۶. قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) مَنْ
سَرَّهُ أَنْ يَسْتَجِيْبَ اللهُ لَهُ عِنْدَ الشَّدَائِدِ وَ الْكُرَبِ
فَلْيُكْثِرِ الدَّعَاءَ فِي الرَّخَاءِ
৬.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি বিপদাপদ ও সংকটের সময় আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করে আনন্দিত হতে চায় সে যেন সুখ-স্বাচ্ছন্দের সময় অধিক পরিমাণে দোয়া করে।-জামে
আত তিরমিযী
No comments:
Post a Comment