বর্তমান সামাজিক অবক্ষয়
প্রতিরোধে
‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম’-এর
আদর্শ
রচনায়
মুহাম্মাদ সজিবুর রহমান
নির্দেশনায়
প্রফেসর ড.এম.আতাউর
রহমান
তত্ত্বাবধানে
মুফতী মাহমূদুল হক (চকরিয়াবী)
মুফতী
ও মুহাদ্দিসঃ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।
বর্তমান সামাজিক অবক্ষয়
প্রতিরোধে
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর আদর্শ
রচনায়
মুহাম্মাদ সজিবুর
রহমান
বিবিএ (HRM), এমবিএ (HRM)
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল
ইউনির্ভাসিটি
নির্দেশনায়
ড. এম. আতাউর রহমান
অধ্যাপক
ব্যবস্থাপনা স্টাডিজ বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
তত্ত্বাবধানে
মুফতী মাহমূদুল হক (চকরিয়াবী)
মুফতী ও মুহাদ্দিসঃ
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।
গ্রন্থের নাম
বর্তমান সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
আদর্শ
রচনায়ঃ মুহাম্মাদ সজিবুর রহমান
নির্দেশনায়ঃ ড. এম. আতাউর রহমান
অধ্যাপক, ব্যবস্থাপনা স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
তত্ত্বাবধানেঃ মুফতী মাহমূদুল হক
মুফতী ও
মুহাদ্দিসঃ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা
প্রুফ সংশোধনঃ মাওলানা মুহাম্মাদ কাওছার আলী মাতুব্বর
গ্রন্থস্বত্বঃ লেখক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রকাশকালঃ জুন ২১, ২০১৩
শব্দবিন্যাসঃ মুহাম্মাদ সজিবুর রহমান
সহযোগিতায়ঃ হাফেজ মাওলানা মোঃ আবুল হাসেম
মূল্যঃ ৪০ টাকা মাত্র
Bortoman Samajik Obokkhoy Protirodhe
Muhammad Sallallahu Alaihi Wa Sallam er Adorsho Written by Muhammad Sojibur
Rahman.
Price: 30 Taka Only
Address: khilket, Moddo Para,
Dhaka-1229.
Phone: 01674897939 E-mail: sr_omic@yahoo.com
উৎসর্গ
যারা দুঃখ-কষ্টের মাঝেও আমাকে স্নেহ-ভালবাসা দিয়ে লালন-পালনসহ দ্বীনি এলম শেখার ব্যবস্থা করতেছেন সেই শ্রদ্ধেয়
পিতা মোঃ আমিনুর রহমান
ও
আমার দ্বীনি শিক্ষার উৎসাহদানকারী নানাজান
মরহুম মোঃ মতিয়ার রহমান এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রফেসর ড. এম.
আতাউর রহমান
স্যার
-এর উদ্দেশ্যে আমার এই বইটি উৎসর্গ করলাম।
লেখকের আরয
সকল প্রসংশা আল্লাহ তা’আলার যিনি আমার মতো নগণ্য তালেবে এলেমকে “বর্তমান সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
আদর্শ”-শীর্ষক এই পুস্তিকাটি লেখার তাওফিক দান করেছেন। এবং প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি জানাই হাজার হাজার দুরূদ ও সালাম।
বর্তমানে আধুনিক সভ্যতার যুগে দুনিয়ার মানুষ আজ দিশেহারা, সুখ-সামগ্রী সংগ্রহে সকলেই সদা ব্যস্ত, অথচ শান্তি থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। এ অশান্ত পৃথিবীতে শান্তি ফিরে পেতে হলে চাই পবিত্র কুরআনের মহান শিক্ষা। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূতঃপবিত্র জীবনাদর্শ। বিশ্ব মানবের কল্যাণ সাধনের জন্য অন্য কোন বিকল্প পন্থা নেই।
কাজেই যে ব্যক্তি দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কাজে আল্লাহ পাকের পথের পথিক হয়ে দুনিয়া থেকে মুক্তি পেতে চায়, তার জন্য আল্লাহর রসূলের অনুসরণ ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। এ ধরনের মানুষকে যথেষ্ট ভেবে-চিন্তে, বুঝে-শুনে অবিচল বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর রসূলের পথ অনুসরণ করতে হবে। তাকে বুঝতে হবে, এটাই হচ্ছে পরওয়ারদেগারের সোজা পথ। আমাদের নেতা, আমাদের পথপ্রদর্শক আল্লাহর রসূল জীবনের সকল দিক ও বিভাগে অনুসরণযোগ্য আদর্শ রেখে গেছেন। তাঁর আদর্শের মধ্যেই নেতা, কর্মী, শাসক-শাসিত, পথপ্রদর্শক ও মোজাহিদদের জন্য হিদায়াতের আলো রয়েছে। প্রিয় নবীর আদর্শ মানুষের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, পারস্পরিক সম্পর্ক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তথা প্রতিটি ক্ষেত্রেই সর্বোত্তম আদর্শ।
আর তাই আমি এখানে নবীর আদর্শ সম্পর্কে বিভিন্ন ধর্মের সুপরিচিত ব্যক্তিদের বক্তব্য সংক্ষেপে তুলে ধরেছি, যাতে সবাই বুঝতে পারে সবক্ষেত্রেই হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ ছিল মহান। আর এটা সব ধর্মের ব্যক্তিবর্গও জানেন। আমি এই পুস্তিকা রচনায় আব্দুল্লাহ মামুন সাহেবের গ্রন্থের সহযোগিতা নিয়েছি। আর কিছু কিছু স্থানে তার গ্রন্থের তথ্য হুবুহু এই গ্রন্থে লেখেছি। তাই আমি আন্তরিকভাবে তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যেহেতু আমি একজন ছাত্র, তাই ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। কেননা মানুষ ভুলের উদ্ধে নয়। তারপরেও পুস্তিকাটিকে ভুল থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করেছি । তাই বসুন্ধরা ইসলামিক রিচার্স সেন্টার-এর দারুল ইফতা বিভাগের মুফতী ও
মুহাদ্দিস জনাব মাহমূদুল হক (চকরিয়াবী) সাহেব ও মাওলানা কাওছার আলী সাহেবকে দিয়ে ভালমতো যাচাই করেছি। এছাড়াও বাংলা ব্যাকারণেও যাতে ভুল না হয় সেজন্য মতিঝিল মডেল হাইস্কুল এন্ড কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী শিক্ষক মোঃ রাশেদুজ্জামান স্যারকে দেখিয়েছি। তিনি খুঁজে খুঁজে ভুলত্রুটি সংশোধন করার চেষ্টা করেছেন। এরপরেও ভুল থাকতে পারে। যদি পাঠকের দৃষ্টিতে কোন ভুল ধরা পড়ে, তাহলে ভুলটি সম্পর্কে জানিয়ে উপকৃত করবেন।
আজকে মানুষ প্রিয় নবীকে বাদ দিয়ে যাদের অনুসরণ করে ভুল পথে চলতেছে তা বুঝান এবং সঠিক পথে চলতে হলে, শান্তি পেতে হলে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করতেই হবে, এটা তুলে ধরাই ছিল আমার লেখার মূল উদ্দেশ্য। আল্লাহ তা’আলা এই উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে আমার নাজাতের ব্যবস্থা করুন। আমিন।
মুহাম্মাদ সজিবুর রহমান
বিবিএ,
এমবিএ (এইচ.আর.এম)
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভারসিটি
বসুন্ধরা ইসলামিক রিচার্স সেন্টার-এর দারুল ইফতা
বিভাগের মুফতী ও
মুহাদ্দিস মাহমূদুল হক (চকরিয়াবী) সাহেবের অভিমত
বিশ্ব মানবতার মুক্তি এবং কল্যাণ একমাত্র বিশ্বমানব হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শে বিদ্যমান। আল্লাহপাক কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন,
حَسَنَةٌ أُسْوَةٌ اللَّهِ رَسُولِ فِي لَكُمْ كَانَ لَقَدْ
অর্থঃ তোমাদের জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা-আহযাব-২১)
এই আদর্শই পশু সমতুল্য বর্বরতায় নিমজ্জিত জাহিলিয়াতের যুগে মানব জাতিকে উৎকৃষ্ট এবং চরিত্রবান মানব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যারা নবীজির আদর্শে আদর্শবান তারাই সুশীল সমাজ মানব জাতিকে উপহার দিতে পেরেছে। অতীত,
বর্তমান, ভবিষত সর্বকালে যে বা যারাই নবীর আদর্শকে ব্যক্তি জীবনে, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, পারিবারিক ও আন্তর্জাতিক জীবনে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে, তারাই সুমধুর শান্তির নিঃশ্বাস নিয়ে এ ভূমন্ডলে বসবাস করার সুযোগ পেয়েছে। নবীজির আদর্শই একমাত্র শান্তির পাথেয়। আমার অতি স্নেহের ভাই ও ছাত্র মুহাম্মাদ সজিবুর রহমানের রচিত
“বর্তমান সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর
আদর্শ” শিরোনামে
বইখানা পড়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। দোয়া করি আল্লাহ তা’আলা
যেন, লেখকের এই প্রয়াসটুকু কবুল করে এবং ভবিষ্যৎ জাতিকে
লেখনির মাধ্যমে আর্দশবান জাতি উপহার দিতে পারে। আমিন ইয়া রব্বুল ‘আলামিন।
তারিখঃ-০৫/০৫/২০১১
মুফতি মাহমূদুল হক
মুফতী ও
মুহাদ্দিসঃ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত অধ্যাপক ড. এম. আতাউর
রহমান স্যার-এর দুআ ও অভিমত
সকল প্রসংশা সেই আল্লাহর যিনি মানুষকে শ্রেষ্ঠতম গঠণে সৃষ্টি করে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। আর পথভোলা মানুষদেরকে পথ দেখানোর জন্য যুগে যুগে অনেক নবী-রাসূলকে আল্লাহ তা’আলা দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। নবীদের আগমনের দিক দিয়ে সর্বশেষ নবী, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে “রাহমাতুল্লিল ‘আলামিন” হিসাবে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। আর কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম ধর্মের অনুসারীগণ তাঁরই অনুসরণ-অনুকরণ করবে। নবীজির আদর্শের বর্ণনা পবিত্র কুরআনের মধ্যেই বিদ্যমান রয়েছে। নবীজীর আদর্শের উপর আমার স্নেহভাজন ছাত্র মুহাম্মাদ সজিবুর রহমান পবিত্র কুরআনুল কারীম, হাদিস ও মহা মনীষীদের বক্তব্য উদ্ধৃতিসহ যে বইটি লিখেছে তা আমি গভীরভাবে পড়েছি। এরকম একটি বই লেখার জন্য আমি তাঁকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই, যেটা বর্তমান সময়ের ছাত্রদের জন্য খুবই উপকারী হবে বলে আমি মনে করি। আমি প্রার্থনা করি,
আল্লাহ তা’আলা তাঁর এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে কবুল করে তাঁর নাজাতের ফয়সালা করে দিন। আমিন।
অধ্যাপক ড. এম. আতাউর রহমান
চেয়ারম্যান
ব্যবস্থাপনা স্টাডিজ বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
লোহাইড় দারুল উলূম ফাযিল মাদ্রাসার আবরী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মোঃ কাওছার আলী সাহেব-এর অভিমত
আলহামদুলিল্লা, বিশ্ববিদ্যালয়ের MBA অধ্যয়নরত ছাত্র হিসাবে “বর্তমান সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে মহানবী (সঃ) এর আদর্শ” শীর্ষক শিরোনামে পবিত্র কুরআনুল কারীম ও হাদীসে রাসূল (সঃ)এবং বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মহা মনীষীদের বক্তব্য উপস্থাপনার মাধ্যমে যে ছোট্ট পুস্তিকাখানি পেশ করিতে সক্ষম হইয়াছে, নিঃসন্দেহে উহা প্রশংসার দাবীদার। মানুষ যেহেতু ভুলের উর্ব্ধে নয়,
সেহেতু নতুন লেখক হিসাবে ভুল-ত্রুটি হওয়াটা-ই স্বাভাবিক, তাহা সত্বেও আমি বইটি ভালভাবে যাচাই করিয়া দেখিয়াছি। আমার দৃষ্টিতে বইটি মোটামুটি ভালই হইয়াছে। আশা করি পাঠান্তে পাঠকবৃন্দও উপকৃত হইবেন।
তারিখঃ-০৫/০৫/২০১১
মাওলানা মোঃ কাওছার আলী মাতুব্বর
সহকারী অধ্যাপক (আরবী)
লোহাইড় দারুল উলূম ফাযিল মাদ্রাসা
মুকসুদপুর-গোপালগঞ্জ।
বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর ক্যাপ্টেন কে. এ. তৌহিদ (অবঃ) সাহেব-এর অভিমত
আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহপাক আমাদেরকে আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত বানিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। আমাদের নবী্র আগমণের পর আল্লাহ তা’আলা নবুয়াতের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিয়ামত পর্যন্ত মানুষকে যাঁর অনুসরণ করতে হবে, তিনিই হলেন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি ছিলেন উত্তম চরিত্রে অধিকারী। তাঁর আদর্শের গুনকীর্তন কিয়ামত পর্যন্ত লেখালেখির মাধ্যমে করা হবে। আর বর্তমান পেক্ষাপতে বিশ্ববিদ্যালয়ে MBA অধ্যয়নরত ছাত্র হিসাবে মুহাম্মাদ সজিবুর রহমান “বর্তমান সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ”-শিরোনামে যে পুস্তিকাটি আল্লাহ তা’আলাকে সন্তুষ্টির জন্য ইসলামের খেদমতের উদ্দেশ্যে পেশ করেছেন, উহা নিঃসন্দেহে প্রসংশারযোগ্য। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে এরকম তথ্যবহুল পুস্তিকা রচনার জন্যধন্যবাদ জানাচ্ছি । আল্লাহ তা’আলার কাছে প্রার্থনা করি, আল্লাহ যেন তাঁর নেক আশা পূরণ করেন ও দ্বীনের সঠিক জ্ঞান বৃদ্ধি করেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত এ রাস্তায় কায়েম রাখেন। আমিন।
ক্যাপ্টেন কে. এ.
তৌহিদ (অবঃ)
খিলখেত, মধ্যপারা,
ঢাকা-১২২৯।
সূচিপত্র
১. নবীর আর্দশ কেমন ছিল? .....................
১১
২. আর্দশের শিক্ষা কী ছিল? ......................
১৬
৩. আর্দশের প্রভাব ……………………………….. ১৭
৪. তিনি সফল হতে পেরেছেন কিনা?…………… ১৮
৫. তাঁর আর্দশ কোথায় পাব? .………………….. ২০
৬. কুরআন কী ও কেন? .........................
২১
৭. জ্ঞানী কারা …………………………………… ২৩
৮. নির্বোধ কারা ………………………………….. ২৩
৯. বুঝে আসে না ………………………………….. ২৪
১০. চারটি সাক্ষী প্রস্তুত …………………………… ২৬
১১. প্রত্যেকে কর্ম সম্পর্কে জানবে ……………....
২৯
১২. কেউ অন্যের ভার নিবে না ………………… ৩১
১৩. দুনিয়া হল খেল-তামাশা ……………........ ৩২
১৪. কুরআন ও হাদিস অনুসরণ করলে কী লাভ?.................................................
৩৩
১৫. অনুসরণ না করলে কী ক্ষতি? ……………. ৩৪
১৬. প্রকৃত বুদ্ধিমান কে …………………………. ৩৫
মানুষ সামাজিক জীব। আর এটি সামাজিক অবক্ষয় নিয়েই কথা। যেহেতু একটি সমাজে আমরা সবাই মিলেমিশে বসবাস করি, সেহেতু এখানে বিভিন্ন ধর্মের লোকজনও থাকে। তাই একটি সমাজে কার আদর্শ অনুসরণ করা হবে,
সেই জন্য দরকার সমাজের জ্ঞানী ব্যক্তিদের পর্যালোচনা ও তাদের অভিমত এবং সবার সেই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে জানে না বা তাঁর নাম কেউ কোনদিন শুনেন নি এই ধরণের লোক পাওয়া খুবই দুষ্কর। সবাই তাঁর সম্পর্কে কমবেশি জানি। আর এখানে প্রথমেই আমি মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ সম্পর্কে সমাজের বিভিন্ন ধর্মের বিখ্যাত লেখক,
পন্ডিত ও ঐতিহাসিকগণ কী বলেছেন তা সংক্ষেপে লিখছি।
Encyclopedia Britannica’র তথ্য মতে,“সকল ধর্মীয় নেতা ও ব্যক্তিদের মধ্যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বাধিক সফলতা অর্জনকারী।”
হযরত মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় Encyclopedia
Britannica’র ২২ খন্ডের, পৃষ্ঠা (১-৪৯) পর্যন্ত, (কুরআন ও ইসলাম, পৃষ্ঠা-৪)
চিন্তা করেন, সকল ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে তিনিই একমাত্রসর্বাধিক সফলতা অর্জনকারী। আর তাই মাইকেল.এইচ.হার্ট তাঁর স্বরচিত বই “The Hundred” এর মধ্যে ১ নংম্বর শ্রেষ্ঠ মানব, সবার উপর শ্রেষ্ঠ যার আর্দশ, সেই হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্থান দিয়েছেন। একজন অমুসলিম হয়েও তার বইয়ে ১ নংম্বর র্যাংকিংয়ে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহিস সালামকে সম্মান দিয়েছেন। তাহলে চিন্তার বিষয় সবার উপরে যিনি আসন করে নিয়েছেন, কেমন ছিল তাঁর আদর্শ ?
আমরা সর্বাধিক সফলতা অর্জনকারী নেতার পরিচয় পেলাম, তাহলে এখন জানব তাঁর আদর্শ কী ছিল?
এ সম্পর্কে জার্মান মনীষী ডঃ গুসতাভ উইল বলেন,
“হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় জনগণকে এক উজ্জ্বল আদর্শ প্রদর্শন করেছেন। তাঁর চরিত্র ছিল পবিত্র ও সরল। আর জনহিতৈষী কর্ম ও বদান্যতা অপরিসীম ছিল। তিনি স্বীয় সম্প্রদায়কে হিতের জন্য ও সমভাবে উদগ্রিব ছিলেন। চতুর্দিক থেকে অবিরল ধারায় সংখ্যাতীত উপটৌকন পেলেও তিনি যৎসামান্য রেখে গিয়েছিলেন এবং তাও সর্ব সাধারণের মনে করতেন।” (নবী শ্রেষ্ঠ, পৃ, ৩৪২-৩৪৩ ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে অমুসলিম মনীষীদের বাণী, পৃ, ৫২-৫৩)
নবীর আদর্শ সম্পর্কে বিখ্যাত মনীষী এডওয়ার্ড গিবন বলেন, “মক্কার পয়গম্বর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিমা, মানুষ, গ্রহ-নক্ষত্রের পূজাকে অস্বীকার করেছেন। তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক ও যুক্তিগ্রাহ্য মূলণীতি সামনে রাখলেন। যা উদিত হয় তা অস্তমিত হবে। এবং যা জীবিত তা একদিন মরে যাবে। যে সরলতা আর যুক্তির সাথে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর একত্বের বিশ্বাস ও প্রমাণ পেশ করেছেন, সারা পৃথিবীতে এর উদাহারণ পাওয়া যায় না।” (অমুসলিম মনীষীদের চোখে আমাদের প্রিয় নবী, পৃ, ৩৯-৪০)
এছাড়াও এই বইয়ের ৭ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়াছে, “এই পৃথিবীর কোন মানুষ যদি কখনো সৃষ্টিকর্তাকে দেখে থাকেন, কোন মানুষ যদি কখনো সৎ ও মহান উদ্দেশ্য নিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চিতরূপে সেই ব্যক্তিটি হলেন আরবের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
চিন্তা করেন! তাহলে তাঁর জীবনের সাথে অন্য কারো জীবন কি তুলনা করা যায়?
নিঃসন্দেহে নয়।
আর এই কথাটির বর্ণনা পাওয়া যায় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে অমুসলিম মনীষীদের বানীর ৩১ নং পৃষ্ঠায় যে, “হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের সঙ্গে তুলনা হতে পারে এমন কোন জীবনী আর নেই।”
এখন প্রশ্ন হল,
যে নবীর জীবনের সাথে কারো জীবনী তুলনা হতে পারে না, যার আদর্শ ছিল মহান,
তাঁর কি কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ ছিল?
এই প্রশ্নের জবাব,
অধ্যাপক নাফানিয়েল স্মিথের উক্তির দ্বারাই দিচ্ছি, যার উল্লেখ আছে New International
Encyclopedia-তে যে,
“নবী হিসাবে তাঁর কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ ছিল না বা কখনো তিনি কোন নিষ্ঠুরতার প্রশ্রয় দেন নি। তিনি সর্বদা সত্যানুন্ধানী ছিলেন।”
এছাড়াও ডঃ মার্কোস উড এর উক্তিটি ও গুরুত্বপূর্ণ, যার উল্লেখ আছে, জগৎগুরু হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ৮৪ পৃষ্ঠায়, “ন্যায় প্রতিষ্ঠায় তিনি জীবিনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। বছরের পর বছর ধরে প্রতিদিন নির্যাতন ভোগ করেছেন। নির্বাসিত হয়েছেন। সহয় সম্পদ হারা হয়েছেন। আত্নীয়-স্বজনের রোষানলে পড়েছেন। কিন্তূ কোন প্রাচুর্যের মোহ,
হূমকি কিংবা প্রলোভনই তাঁর ন্যায়ের কন্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে পারে না।”
এছাড়াও সীরাতে মুগলতাইয়ের ২০ নং পৃষ্ঠায় এবং সীরাতে ইবনে হীশামের ১ম খন্ডের, ২৯৩-২৯৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “……………। উতবা ইবনে রাবিআ নবীজির দরবারে এসে উপস্থিত হল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন মসজিদে নামায পড়ছিলেন। সে নবীজির নিকটে গিয়ে বলল,
ভাতিজা, তুমি বংশমর্যাদা ও সম্ভ্রান্ততায় আমাদের সবার চেয়ে উত্তম। তা সত্ত্বেও তুমি তোমার লোকজনের মধ্যে বিরোধ ও মতাভেদ সৃষ্টি করে ফেলেছ। তুমি তাদের দেব-দেবীকে এবং তাদের নিজেদেরকে নানা রকম ভাল-মন্দ বলছ। তাদেরকে এবং তাদের পিতৃপুরুষকে মূর্খ ও বোকা বলছ। তুমি আজ সত্যি করে তোমার মনের কথাটা বলতো। তোমার এসব কর্মকান্ডের মূলে উদ্দেশ্য যদি এই থাকে যে,
তুমি অনেক ধন-দৌলত সঞ্চয় করবে,তাহলে শোন! আমরা তোমার জন্য এ পরিমাণ ধন-সম্পদ যোগাড় করে দিতে প্রস্তুত আছি যে,
তুমি মক্কার সকলের চেয়ে অধিক বিত্তের অধিকারী হয়ে যাবে। যদি তোমার উদ্দেশ্য এই হয় যে, তুমি নেতা হবে, তাহলে আমরা সবাই তাতে রাজি আছি। আমরা তোমাকে কুরাইশদের নেতা বানিয়ে দেব এবং তোমার হুকুম ছাড়া একটি কথাও এদিক ওদিক হবে না। তোমার যদি এই ইচ্ছা হয় যে, তুমি আমাদের বাদশাহ হবে,তবে আমরা সবাই মিলে তোমাকে আমাদের বাদশাহ হিসাবেও মেনে নিতে পারি। আর যদি তোমার উপর কোন দুষ্টু জ্বিনের আছড় হয়ে থাকে। আর ঐ দুষ্টু জ্বিনের কথাবার্তাই(ওহী) তুমি মানুষকে শোনাও এবং তুমি একা সেটাকে তাড়াতে পারছ না,
তাহলে আমরা তোমার জন্য কোন চিকিৎসক খুঁজে দেখি, যে তোমার সুচিকিৎসা করে তোমাকে সুস্থ্য্ করে তুলবে। এরকম লোভনীয় কথার জবাব হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের ভাষায় দিলেন। তিনি সূরা-হামীম সেজদার প্রথম থেকে কিছু আয়াত তেলোওয়াত শুরু করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তেলোওয়াত করে যাচ্ছিলেন আর ওতবা দু’হাত পিছনের দিকে মাটিতে ঠেস দিয়ে রেখে শুনে যাচ্ছিলো। এক পর্যায়ে যখন রাসূলু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেজদার আয়াত তেলোওয়াত করলেন তখন উঠে সেজদা করলেন। এরপর বললেন, আবুল ওলীদ, তুমি যা কিছু শুনতে চেয়েছিলে, আমি শুনিয়েছি, এবার তুমি জানো আর তোমার কাজ জানে”।
যাহোক লম্বা ঘটনা। এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে এটাই বুঝানো যে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পার্থিব জিনিসের প্রতি লোভ-লালসা ছিল না এবং কখনোও চিন্তাও করেন নি, বরং তিনি মানবজাতির মুক্তির কথা চিন্তা করতেন। এ কথা তখনকার কাফিররাও বুঝতেন, কিন্তু মানতেন না।
তাফসীরে ইবনে কাসীরের অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই সূরা-হামীম সাজদার আয়াত তেলোওয়াত শুরু করলে ওতবা চুপচাপ শুনতে থাকে। তিনি যখন আল্লাহ তা’আলার এ বানীতে উপনীত হলেন-“
যদি ওরা মুখ ফিরিয়ে নেয়,
তবে আমি তো তোমাদের সতর্ক করছি এক ধবংসকর শাস্তির, যা আদ ও সামুদের শাস্তির অনুরূপ।” এ আয়াত তেলোওয়াতের সাথে সাথে ওতবা উঠে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের মুখে হাত চাপা দিয়ে বললো, আমি আপনাকে আল্লাহ এবং আত্নীয়তার দোহাই দিয়ে বলছি, আপনি এরূপ করবেন না। ওতবা আশঙ্কা করছিলো, ঐ রকম শাস্তি তাদের ওপর চেপে না পড়ে। এরপর সে উঠে তাঁর সঙ্গিদের কাছে যায় এবং সেখানে তাদের সাথে উল্লেখিত কথাবার্তা হয়।” (তাফসীরে ইবনে কাসীর, খন্ড-৬,পৃষ্ঠা-১৫৯-১৬১)
তাহলে এবার চিন্তার বিষয় এই,
যাঁর আদর্শের কথা বলি তিনি কেমন লোক ছিলেন এবং তাঁর কথা কত সুন্দর ও মার্জিত ছিল,
কত যৌক্তিক ও বাস্তবিক ছিল যে, অমুসলিম পর্যন্ত তার ভয় করেছিল। আর এরকম নেতাই তো আমাদের দরকার,যার চরিত্র হবে উৎকৃষ্ট, মনটা হবে কোমল,
কথাবার্তা হবে আকর্ষনীয়, মার্জিত। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল গুনের অধিকারী ছিলেন।
সীরাতে ইবনে হিশামের ১ম খন্ড, (৪০১-৪০২) পৃষ্ঠার তথ্যমতে জানতে পারি,
“তিনি ছিলেন সকল নবীর শেষ নবী, ছিলেন সর্বাধিক দানশীল, সর্বাধিক সাহসী, সর্বাধিক সত্যবাদী, সর্বাধিক অঙ্গিকার পালনকারী, সর্বাধিক কোমলপ্রাণ, সর্বাধিক অভিজাত্যসম্পন্ন। হঠাৎ করে কেউ তাঁকে দেখলে ভীত-বিহবল হয়ে পড়তো,
পরিচিত কেউ তাঁর সামনে গেলে ভালবাসায় ব্যাকুল হত। তাঁর গুন বৈশিষ্ট্য বর্ণানাকারীকে বলতে হত, আমি তাঁর আগে তাঁর মতো অন্য কাউকে দেখিনি।”
এছাড়াও সহীহ মুসলিম শরীফের ২য় খন্ডের ২৫৮নং পৃষ্ঠা্য় উল্লেখ আছে, “হযরত বারা ইবনে আযেব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,
তাঁর চেহারা ছিলো সবচেয়ে সুন্দর এবং তারঁ চরিত্র বৈশিষ্ট্য ছিলো সকলের চেয়ে উৎকৃষ্ট।”
সহীহ বুখারীর ২য় খন্ডের ৫০২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “হযরত কা’ব ইবনে মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু)
বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন খুশী হতেন, তখন তাঁর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠতো। দেখে মনে হত যেন এক টুকরো চাঁদ।”
এছাড়াও বর্ণিত আছে সহীহ বুখারীর ২য় খন্ডের ৫১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “হযরত জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,
কখনোই এমন হয়নি যে, কেউ তাঁর কাছে কিছু চেয়েছে অথচ তিনি দিতে অসম্মতি জানিয়েছেন।”
এছাড়াও বীরত্ব বাহাদুরীতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্থান ছিল সবার ওপরে। তিনি ছিলেন সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বীর। কঠিন পরিস্থিতিতে বিশিষ্ট বীর পুরুষদেরও যখন পদস্খলন হয়ে যেত,
সে সময়ও তিনি অটল অবিচল থাকতেন। তাঁর দৃঢ়চিত্ততায় এতটুকু বিচলিত ভাব আসতো না। অনেক বড় বড় বীর বাহাদুরও কখনো কখনো পলায়ন করেছেন, পিছপা হয়েছেন, কিন্তূ তাঁর মাঝে এটা কখনো পাওয়া যায়নি। বিস্তারিত দেখুনঃ আশ শেফা (কাযি ইয়ায) কিতাবের ১ম খন্ডের ৮৯ নং পৃষ্ঠায়।
এখন প্রশ্ন হল,
তিনি তো এসকল গুনের অধিকারী ছিলেন, তাহলে তাঁর আদর্শের শিক্ষা ও প্রভাব কী ছিল?
তাই এখন তার আদর্শের শিক্ষা ও প্রভাব তুলে ধরছি। এমিলি ডার্মিংহাম ‘The Life of
Muhammad’ গ্রন্থে বলেন- “মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষা ও আদর্শ আরবদের জীবনধারা বদলে দিয়েছিল, একথা কে অস্বীকার করতে পারে?
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ নারী জাতিকে যে মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন, এরুপ মর্যাদায় নারী জাতিকে ইতোপূর্বে কখনো পায়নি…… মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন হল কুরআনী আদর্শ ও বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত বাস্তবতার প্রোজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। আর তিনি তাঁর কথায় ও কাজে এ সীমারেখা কখনো লংঘন করেননি।”
আর্থার এন.ওয়াল.স্টোন বলেন, “মানুষের হৃদয়ে প্রভাব বিস্তার করার যে বিপুল ক্ষমতার অধিকারী তিনি ছিলেন, মানুব জাতির ইতিহাসে কেউ কোন দিন আর তা অতিক্রম করতে পারেনি, কিংবা কেউ তাঁর সমকক্ষ হতে পারেনি।” (জগৎগুরু হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ৮৩ পৃষ্ঠা)
আর .লিন্ডাও ‘Islam and the
Arabs’ গ্রন্থে বলেন, “অন্যায় অবিচারের স্থানে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উত্তলন করতে হয়েছিল মানবতার বিজয় পতাকা এবং শৃংখলা ও সুনীতি। পেশী শক্তি ও সন্ত্রাস দাপটের মাঝে তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়েছিল শান্তি ও ন্যায় বিচার।”
ডঃ কুষ্ট কার এ সম্পর্কে আরো স্পষ্ট করে বলেন, যার উল্লেখ আছে ‘নবী শ্রেষ্ঠ’ গ্রন্থে যে, “হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে জীবন ব্যবস্থা বিশ্বের সামনে পেশ করেছেন সে এক আশ্চর্যের কথা এবং প্রাকৃতিক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা মানুষের ঠিক প্রকৃতি অনুযায়ী গঠিত। তিনি ছোট বড় সকল পার্থক্য মিটিয়েছেন। আমরা ইউরোপবাসী ইসলামের নিকট চিরকৃতজ্ঞ। তিনি আমাদেরকে সভ্যতা ও মানবতা শিক্ষা দিয়েছেন।”
এছাড়াও রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে ঐতিহাসিক এস.পি.স্কট তাঁর “মনুমেন্টাল হিস্টরী অব দি মুরিশ এম্পায়ার ইন ইউরোপ” গ্রন্থে চমৎকার কথা লিখেছেন যে, “রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে অত্যন্ত জটিল সমস্যা সমাধানের অপূর্ব ক্ষমতা ছিল তাঁর।তাঁর মত রাজনৈতিক প্রজ্ঞাসম্পূন্ন ব্যক্তি ইতিহাসে বিরল। তাই ইতিহাসে অতি গর্বের সাথে তাঁকে “আর্টিফিসার্স অব ন্যাশন্স” বা ‘জাতি গঠণের সুনিপূণ শিল্পী “উপাধি দিয়েছেন।”
প্রফেসর স্টিফেন বলেন, যার উল্লেখ আছে জগৎগুরু হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ৮৩ পৃষ্ঠায়, “মহাবিজ্ঞতা প্রসূত একটি মাত্র উদ্যোগে তিনি একই সঙ্গে তাঁর দেশের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও নৈতিক ক্ষেত্রে সঠিক পরিবর্তণ এনে দিয়েছিলেন।” এরকম আরোও উক্তি দেয়া যায়, যারা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ সম্পর্কে সুন্দরকথা ব্যক্ত করেছেন। লেখা বড় হবার আশঙ্কায় সংক্ষিপ্ত করলাম। হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সান্নিধে যারা যেতেন, তারা তাঁর প্রভাব অবশ্যই অনুভব করতেন।
আর এক্ষেত্রে একটি কথা না বলে পারছি না যে,
খ্যাতনামা হিন্দু পন্ডিত দেওয়ান চাঁদ শর্মা
‘The Prophet of East’ গ্রন্থের ১২২ নং পৃষ্ঠায় বলেন,
“হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন পরোপকারের জীবন্ত প্রতিমূর্তি। তাঁর সান্নিধ্যে যারা আসতেন, তারা তাঁর প্রভাব এতটাই অনুভব করত যে,
তাঁর কথা আর কোনদিন ভুলতে পারতেন না।”
চিন্তা করেন, এসব কথা কারা বলেছেন। মুসলমানদের কথা না হয় এখানে নাই বললাম, কিন্তূ এসব কথা তো কোন মুসলমানের কথা না। বরং এগুলো হচ্ছে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কথা। তাঁরা পর্যন্ত স্বীকার করেছেন যে,
তাঁর আর্দশই মানব জাতির ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ উপাধি লাভ করছেন।
এই সম্পর্কে আলফ্রেড গ্যালিউম ‘Islam’ নামকগ্রন্থে বলেন, “মানব ইতিহাসে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মর্যাদা সর্বোচ্চ ও স্বতন্ত্র। তাঁর সবচেয়ে বড় বিজয়হল, তিনি মানুষকে আল্লাহর একত্বে ও বিশ্ব মুসলিম জাতীয়তায় বিশ্বাসী হতে রাজী করিয়েছেন।” এখন সবার মনে একটা প্রশ্ন জাগতে পারে,
হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে সবাই একথাই বুঝিয়েছেন যে,
তিনি মানুষকে মুক্তির পথ দেখিয়াছেন। কিন্তূ তিনি কি তাঁর কাজে সফলতা অর্জন করতে পেরেছিলেন?
এবারও এ প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি ডি.এস.মারগালিউথ এর লেখার মাধ্যমে যার উল্লেখ আছে ‘Muhammad and the
rise of Islam’ নামকগ্রন্থে যে,
“যখন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল করেন তখন তাঁর মিশন অসম্পূর্ণ ছিল না। তিনি জীবদ্দশাতেই নিজের আত্নিক ও রাজনৈতিক মহান মিশনকে পূর্ণতায় পৌছে দিয়েছেন।”
তাই এতে কারো কোন সন্দেহ নে যে,
তাঁর মিশন সম্পূর্ণ ছিল না। আর এখানে সুবিখ্যাত পরিব্রাজক চন্দ্র শেখর সেন (বার.এট.ল) এর কথা উল্লেখযোগ্য। তিনি ভূপ্রদক্ষিন গ্রন্থের ৫২৫ পৃষ্ঠায় বলেন, “কেবলমাত্র পঁচিশ বৎসরের বালক হযরত আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কে ও বিবিও খাদিজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) কে অবলম্বন করে যিনি সংসারে ধর্ম প্রচার করতে সাহসী ও প্রবৃত্ত হন এবং সেই প্রচারের ফলে সহস্রাধিক বর্ষ পৃথিবীর অর্ধেকস্থান ব্যাপিয়া যে ধর্ম চলছে, তিনি ও তাঁর ধর্ম যে বিধাতার প্রেরিত, তাতে কেবলমাত্র সন্দেহ নেই।”
আর এর সত্যতার প্রমাণ হিসেবে এখানে ই.এইচ.পামার এর মন্তব্য উল্লেখ করছি,
যেটা তিনি তাঁর ‘Introduction to
the Quran’ গ্রন্থে বলেন, “তিনি
(হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেকে যে আল্লাহর বাণীবাহক বলে বিশ্বাস করতেন, এটা আমি বিনা দ্বিধায় মেনে নিচ্ছি। এ ব্যাপারে আরো অনেক কথা বলা গেলও আমি কেবল একটি কথাই বলছি যে,
সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত কোটি কোটি মানুষ এক কথায়,
এই একটি ধর্মকে মেনে নিয়ে গভীর নিষ্ঠা সহকারে এর আদেশ-নির্দেশ অনুসরণ করে জীবন চালাচ্ছে এবং মুসলমানরাই হচ্ছে তাঁর নবুওয়াত লাভের প্রমাণস্বরুপ।”
এছড়াও দেখুনঃ The History of the Arabs (P.K.Hitti), বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে অমুসলিম মনীষীদের বানী, পৃষ্ঠা-(৬৬-৬৭), জগৎগুরু হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ৮৩ পৃষ্ঠা।
তিনি মানুষকে যে ধর্মের দাওয়াত দিয়েছেন তা একমাত্র ছিল ইসলাম ধর্মের, যা মানুষকে খারাপ হতে ভালতে রুপান্তরিত করে দিয়েছিল। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত রসূল ও বান্দা। তিনি পথভোলা মানুষদেরকে সঠিক পথের দিকে ধাবিত করেছেন। আর সেই পথটিই হলো শান্তির পথ, মুক্তির পথ। সেই শান্তির পথের নামই হল ইসলাম ধর্ম। আর এটিই হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম বা জীবনব্যবস্থা।
আর পবিত্র কুরআনের সূরা-আল-ইমরানের ১৯ নং আয়াতে উল্লেখ আছেঃ
الإسْلامُ اللَّهِ عِنْدَ الدِّينَ إِنَّ
“নিশ্চয়ই ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র ধর্ম।” এছাড়াও আছে পবিত্র কুরআনের সূরা-মায়েদার ৩ নং আয়াতেঃ
دِينًا الإسْلامَ لَكُمُ وَرَضِيتُ
“এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য মনোনীত করলাম।”
No comments:
Post a Comment