খুশু-খুযু কি ও কেন ?
নামায ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। কিয়ামত দিবসে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব হবে। দ্বীনি আহকামের মধ্যে পৃথিবী থেকে সর্বশেষে নামাযই বিদায় নিবে। বিভিন্ন লকেরা বলে যে,কুরআনের দেয়া তত্ত্ব অনুযায়ী নামায সমস্ত অর্থনৈতিক ও অমংগল কায থেকে বিরত রাখে। আমরা নামায পড়ি, কিন্তু আমাদের মধ্যে এই প্রভাব পরিলক্ষিত হয় না কেন?
কাজেই কুরআনের এই বর্ণনার প্রতি অনেকের মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়ে থাকে।
আসলে ব্যাপারটা কী? এর প্রতি দৃষ্টিপাত করা উচিত। কুরআন হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী নামাযের প্রাণ হচ্ছে “খুশু-খুযু”
বা বিনয় ও নম্রতা। নামাযের যাবতীয় ফযিলত, প্রভাব ও উপকারিতা এই খুশু-খুযুর সাথেই সম্পৃক্ত। যদি নামাযি খুশু-খুযুর সাথে নামায আদায় না করে, তাহলে তার নামায পার্থিব দায়িত্বমুক্তি ব্যতীত ইহকাল ও পরকালে আর কোন ফায়দা বয়ে আনতে পারবে বলে কোন গ্যারান্টি নেই। পক্ষান্তরে, রসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এরশাদ অনুযায়ী দ্বীনি আহকামের মধ্যে সর্বপ্রথম “খুশু-খুযু”
নামাযিদের অন্তর থেকে বিদায় নিবে। গোটা মসজিদ মুসল্লিদের দ্বারা পরিপূর্ণ থাকলেও কারো অন্তরে খুশু-খুযু থাকবেনা বলে তিনি ভবিষ্যতবাণী দিয়েছেন। সুতরাং এ ধরনের নামায দ্বারা কিভাবে নামাযের যাবতীয় ফললাভের আশা রাখা যায়। তাই চলুন দেখি নামাযে খুশু-খুযু কী এবং কেন?
নামাযে খুশু-খুযু কি ?
খুশু আরবী শব্দ, যার শাব্দিক অর্থ বিনয় ও নম্রতা। পরিভাষায় “খুশু”
শব্দটির দু’টি অর্থ রয়েছে।(এক), বিনয় ও নম্রতা।(দুই) শান্তি ও স্থিরতা। অন্তরে খুশু বলতে এই উভয় অর্থকেই বুঝায়। নামাযের মধ্যে খুশু থেকে উদ্দেশ্য অন্তরের উক্ত অবস্থাদ্বয়, যা অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি প্রসারিত হয় এবং তাতে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারাও শান্ত ও বিনয়ীভাব প্রকাশ পায়। নামাযে আল্লাহর ভালবাসা, ভয়-ভীতি এবং ছাওয়াবের প্রত্যাশায় এর আদ্যোপান্ত যাবতীয় কর্মকান্ডে খুশুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খুশু হচ্ছে নামাযের প্রাণ এবং নামাযের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য। খুশুবিহীন নামাযের দৃষ্টান্ত মৃত লাশের ন্যায়, যার কোন প্রাণ নেই। সত্যিকারার্থে যারা খুশু-খুযুর সহিত নামায আদায় করে,
কুরআন-সুন্নাহর মধ্যে তাদের ব্যাপারে যথেষ্ট ফযিলত বর্ণিত রয়েছে।
“খুশু” এর প্রায় সমার্থবোধক শব্দ হচ্ছে খুযু। তবে উভয় শব্দের মধ্যে সামান্য পার্থক্য বিদ্যমান। তা হচ্ছে, খুশু মূলতঃ কন্ঠ ও দৃষ্টির নিম্নমুখিতা এবং তা এরূপ বিনয় প্রকাশার্থে ব্যবহার হরা হয়,
যা কৃত্রিম নয় বরং অন্তরের ভীতি ও নম্রতার ফলশ্রুতিস্বরূপ হবে। আর “খুযু” শব্দটি দৈহিক ও বাহ্যিক বিনয় ও নম্রতাকে বুঝায়। যেমন কুরআন কারীমে আছে যা, “অতঃপর তাদের কাঁধ তার সামনে ঝুঁকিয়ে দিল।”
খুশু সম্পর্কে সাহাবা-তাবেঈনদের বাণী
হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ইরশাদ করেন, “খুশু এমন একটি অভ্যন্তরীন বিষয়, যার ফলে তোমার বাহু মুসলমানদের জন্য নম্র হবে এবং দিক বিদিক তাকাবেনা।”
হযরত মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, “খুশু হচ্ছে দৃষ্টিকে অবনত করা এবং বাহুকে নিচু করা।”
হযরত আমর ইবনে দিনার (রহঃ) বলেন, “রুকু এবং সিজদার নাম খুশু নয়,
বরং খুশু হচ্ছে নামাযে শান্ত থাকা এবং সুন্দর আকৃতিকে পছন্দ করা।”
হযরত আতা (রহঃ) বলেন, “নামাযে দেহের সাথে খেলে না করার নাম হচ্ছে খুশু।”
নবীজি এক ব্যক্তিকে নামাযে দাড়ির সাথে খেলতে দেখে ইরশাদ করেন,
“যদি এ ব্যক্তির অন্তরে খুশু থাকত, তাহলে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অবশ্যই খুশু প্রসারিত হত।” (ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া খন্ড- ৭, পৃ- ২৮)
খুশু এর ফযিলত
কুরআন কারীমে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
خَاشِعُونَ صَلاتِهِمْ فِي هُمْ الَّذِينَ 0 الْمُؤْمِنُونَ أَفْلَحَ قَدْ
“মু’মিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে। যারা নিজেদের নামাযে বিনয় নম্র।”
(সূরা-মু’মিনুন, আয়াত: ১-২)
হাফেয ইবনে কাছীর (রহঃ)
দ্বিতীয় আয়াতের তাফসীরে লিখেন, যারা আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করে এবং স্থিরতার সাথে নামায আদায় করে,
তারাই এ আয়াতের উদ্দেশ্য। আর “খুশু” অর্থ শান্তময়ীতা, স্থিরতা, ও নম্রতা। যা আল্লাহর ভয় ও তাঁর মুরাকাবার কারণে অন্তর ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা প্রকাশ পায়, এর নামি হচ্ছে খুশু।”
(তাফসীরে ইবনে কাছীর, খন্ড-৩, পৃ-৩১৭)
অন্য আয়াতে আছে,
قَانِتِينَ لِلَّهِ وَقُومُوا
“আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও।” (বাকারা-২৩৮)
অত্র আয়াতে “কুনুত” অর্থ আল্লাহর ভয়ে নত ও নম্র হওয়া, চক্ষু নিচু করা এবং দুই বাহুকে ঝুঁকিয়ে দেয়া।
কুরআন কারীমে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
لْخَاشِعِينَا عَلَى إِلا لَكَبِيرَةٌ وَإِنَّهَا وَالصَّلاةِ بِالصَّبْرِ وَاسْتَعِينُوا
“ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে তোমরা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থণা কর। আর নামায যথেষ্ট কঠিন কাজ, কিন্তু যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় ও নম্রতা বিদ্যমান, তাদের পক্ষে এটা মোটেই কঠিন নয়।”
(বাকারা-৪৫)
হাদিসের আলোকে খুশু-খুযুর গুরুত্ব ও ফযিলাত
হাদিস-১। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
“আল্লাহ তা’আলা পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন।যে ব্যক্তি ভালভাবে অযূ করে যথারীতি খুশু-খুযু সহকারে নামাযগুলো আদায় করবে,
আল্লাহ তা’আলা তার ব্যাপারে অঙ্গিকার করেছেন যে, তিনি তাকে ক্ষমা করবেন।তবে যে ব্যক্তি উক্ত নামাযগুলোকে উক্ত নিয়মানুযায়ী আদায় করবেনা, তার ব্যাওয়ারে আল্লাহর কোন অঙ্গিকার নেই। তিনি ইচ্ছে করলে তাকে মাফ করেতে পারেন আর ইচ্ছে করলে আযাবও দিতে পারেন।”
(আবু-দাউদ শরিফ, হাঃ-৪২৫)
হাদিস-২। হযরত উসমান (রাঃ) বলেন,
“আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই এরশাদ শুনেছি যে,
যদি কোন মুসলমান ফরজ নামাযের জন্য ভালভাবে অযূ করে এবং নামাযের খুশু, রুকূ এবং অন্যান্য রুকনসমূহ যথাযথভাবে পালন করে,
তাহলে সেই নামায তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনার কাফফারা হয়ে যায়। তবে তাকে কোন কবীরা গুনায় লিপ্ত না হতে হবে। এই নীতি সর্বদার জন্য।” (মুসলিম শরিফ, হাঃ-২২৮)
হাদিস-৩। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন,
“ধীর-স্থির ও ন্ম্রতার সাথে মধ্যম পন্থায় দুই রাকাত নামায আদায় করা,
উদাসীনভাবে গোটা রাত জাগ্রত থাকার চেয়েও উত্তম।” (শরহুস সুন্নাহ, বাবুল খুশু ফিস সালাত)
খুশু-এর প্রকারভেদ
খুশু
দুই প্রকার। (১) খুশুঊল ঈমান বা মু’মিনের খুশু
(২) খুশুঊন নিফাক বা মুনাফিকের খুশু
(১) খুশুঊল ঈমান বা মু’মিনের খুশুঃ
আল্লাহর আযমত, বুজুর্গী, সম্মান, ভয় ও শরমের কারণে অন্তর বিগলিত হওয়া, যার ফলে অন্তর আল্লাহর সামনে এমনভাবে ভেঙ্গে পড়ে, যাতে ভয়-ভীতি, শরম, মহব্বত ও আল্লাহর নেয়ামতের স্মরণ সমাগম হয়। ফলশ্রুতিতে অন্তরে সৃষ্টি হয় আল্লাহর খুশু এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো তার অনুসরণে জেগে উঠে।
(২) খুশুঊন নিফাক বা মুনাফিকের খুশুঃ
যেখানে অভ্যন্তরীন খুশু থাকেনা বরং কৃত্রিমভাবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা খুশু প্রকাশ করা হয় তাকে নিফাকের খুশু বলে হয়।
হযরত হুযাইফা (রাঃ) বলেন,
“তোমরা নিফাকের খুশু থেকে বেঁচে থাক। তাঁকে প্রশ্ন করা হল যে,নিফাকের খুশু কি? উত্তরে তিনি বললেন, দেহের মধ্যে খুশু লক্ষ্য করা হবে,
কিন্তু অন্তরে আদৌ খুশু থাকবেনা।”
আরো কতিপয় সাহাবীগণ থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, তাঁরা লোকদেরকে নিফাকের খুশু থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিতেন। এর কারণ হচ্ছে কুরআন পাকে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
الْحَقِّ مِنَ نَزَلَ وَمَا اللَّهِ لِذِكْرِ قُلُوبُهُمْ تَخْشَعَ أَنْ آمَنُوا لِلَّذِينَ يَأْنِ أَلَمْ
“মু’নিনদের জন্য কি এখনো সময় আসেনি যে,
তাদের অন্তর বিগলিত হবে আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তার কারণে।” (সুরা-হাদিদঃ১৬)
অত্র আয়াতে অন্তরের খুশুর প্রতি দাওয়াত দেয়া হয়েছে, যাকে “খুশুঊল ঈমান” বলা হয়। দেহের কৃত্রিম খুশুকে “খুশুঊন নিফাক” বলে,
যা কুরআন হাদিসের দৃষ্টিতে প্রত্যাখ্যাত। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ মাজমুয়াতুল ফাতওয়া-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, খন্ড-৭, পৃঃ২৯)
“খুশু” এর অবস্থান কোথায় ?
খুশুর অবস্থান হচ্ছে অন্তর। অন্তর থেকে খুশু অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রসারিত হয়। যদি বেহুদা কল্পনা-জল্পনার কারণে অন্তরের খুশু নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে অন্যান্য সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের খুশুও নষ্ট হয়ে যাবে। অন্তর হচ্ছে রাজা এবং অন্যান্য সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হচ্ছে তার সৈন্য-সামান্ত। বিনয় ও নম্রতা না থাকার কারণে যদি রাজার পদচ্যুতি হয়, তাহলে প্রজা বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের খুশু নষ্ট হওয়া আবশ্যক। যেমন একবার হযরত ওমর (রাঃ) এক ব্যক্তিকে নামাযে অযথা নড়াচড়া করতে দেখে বলেন, “যদি এ ব্যক্তির অন্তরে খুশু থাকত, তাহলে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশ্যই স্থির থাকত।” (জামে’ ছগীর, হাঃ ৭৪৪৭)
“খুশু” এবং নামাযের সওয়াব
নামাযের সওয়াব “খুশুর” পরিমাণ হিসাবে দান করা হবে। খুশুর পরিমাণ পরিপূর্ণ হলে সওয়াবও পরিপূর্ণ দান করা হবে। আর খুশুর পরিমাণ কম হলে সওয়াবও কম দান করা হবে। তদ্রুপ নামায দ্বারা গুনাহ এবং ত্রুটি-বিচ্যুতিও ক্ষমা করা হবে,
যদি নামায খুশু-খুযুর সাথে পালন করা হয়।
১। হাদিস পাকে বর্ণিত আছে যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
“নিশ্চয় বান্দা নামায আদায় করে, কিন্তু তার নামাযের সওয়াব লিখা হয় দশমাংশ, নবমাংশ, অষ্টমাংশ, সপ্তমাংশ, ষষ্টাংশ, পঞ্চমাংশ, চতুর্থাংশ, তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ।” (মুসনাদে আহমদ, হাঃ ১৮৮৭৯)
২। অন্য হাদিসে বর্ণিত নবীজি ইরশাদ করেন,
“নিশ্চয় বান্দা যখন নামায আরম্ভ করে,
তখন তার সমস্ত গুনাহ উপস্থিত করে তার মাথা কিংবা তার গর্দানের উপর রাখা হয়। যখনই সে রুকু কিংবা সিজদা করে,
তখন তার গুনাহ ঝরতে পড়ে।” (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাঃ ১৭৩৪)
উক্ত হাদিসের অর্থ হচ্ছে যখনই বান্দা কোন রুকুন আদায় করে,
তখনই তার গুনাহর একাংশ তাতে ক্ষমা হয়ে যায়। এমনকি যখন সে সমস্ত রুকুন যথারীতি ও খুশুর সাথে আদায় করে, তখন তার সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
অন্য হাদিসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযকে প্রবাহিত নহরের সাথে তুলনা করেছেন। অর্থাৎ যথাযথভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামায যে ব্যক্তি খুশু-খুযুর সাথে আদায় করবে, আল্লাহ তার সমস্ত গুনাহ মুছে ফেলবেন।
নবীজি আরোও ইরশাদ করেন,
“যদি কোন ব্যক্তির ঘরের সামনে কোন প্রবাহিত নহর থাকে, যাতে সে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে,তাহলে তার শরীর কোন প্রকার ময়লা আবর্জনা থাকতে পারে কি? উত্তরে সাহাবাগণ বললেন, থাকবেনা। তখন নবীজি ইরশাদ করলেন যে, এটা হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দৃষ্টান্ত, যারা খুসুর সাথে যথাযথভাবে তা পালন করবে,
আল্লাহ তা’আলা তার সমস্ত গুনাহ মুছে ফেলবেন।”
(মুসলিম শরীফ, হাঃ ১০৭১)
এভাবে যারা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবেন, তাদের জন্যই রয়েছে এই সুসংবাদ যে,
مُكْرَمُونَ جَنَّاتٍ فِي أُولَئِكَ يُحَافِظُونَ صَلاتِهِمْ عَلَى هُمْ وَالَّذِينَ
“যারা তাদের নামাযকে সংরক্ষন করে, তারাই কেবল সম্মানিত জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
(সূরা-মা’আরিজ-৩৪-৩৫)
খুশুবিহীন নামায অসম্পূর্ণ ও প্রভাবক নয়
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
“আল্লাহ তা’আলা পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি ভালভাবে অযূ করে যথারীতি খুশু-খুযু সহকারে নামাযগুলো আদায় করবে,
আল্লাহ তা’আলা তার ব্যাপারে অঙ্গিকার করেছেন যে, তিনি তাকে ক্ষমা করবেন। তবে যে ব্যক্তি উক্ত নামাযগুলোকে উক্ত নিয়মানুযায়ী আদায় করবেনা, তার ব্যাওয়ারে আল্লাহর কোন অঙ্গিকার নেই। তিনি ইচ্ছে করলে তাকে মাফ করেতে পারেন আর ইচ্ছে করলে আযাবও দিতে পারেন।”
(আবু-দাউদ শরিফ, হাঃ-৪২৫)
নামাযকে যারা নিয়মানুসারে আদায় করবে না,
তাদেরকে নবীজি জঘন্য চোর বলে আখ্যা দিয়েছেন।
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
“সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর হচ্ছে, যে নামাযে চুরি করে। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!নামাযে কিভাবে চুরি করা যায়? উত্তরে নবীজি বললেন, নামাযে রুকু-সিজদাহ যারা পুরোপুরি আদায় করেনা, তারা হল সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর।”
(মুসনাদে আহমদ, হাঃ ১১৫৩২)
নামাযকে যথাযথভাবে খুশুর সাথে আদায় করলে সেই নামায মুসল্লিকে যাবতীয় কাবীরা গুনাহ থেকে রক্ষা করবে। কুরআন পাকে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
وَالْمُنْكَرِ الْفَحْشَاءِ عَنِ
تَنْهَى الصَّلاةَ الصَّلاةَ إِنَّ
“নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।”
(সূরা- আনকাবূতঃ ৪৫)
মু’মিনের অন্তর থেকে সর্বপ্রথম “খুশু”-বিদায় নিবে
উপরোক্ত আয়াত ও হাদিস দ্বারা খুশু মাহাত্ন্য, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীতা অনুধাবন করেছেন। খুশুর এত গুরুত্ব ও মাহাত্ন্য থাকা সত্ত্বেও মু’মিনের অন্তর থেকে ত শ্রীঘই বিদায় নিবে। খুশুর সাথে নামায আদায়কারী লোকের সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণ হ্রাস পাবে। যেমনটা বর্তমান যুগে পরিদৃষ্ট। হাদিসে পাকে বর্ণিত রয়েছে যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
“এই উম্মত থেকে সর্বপ্রথম যে জিনিস উঠিয়ে নেয়া হবে, তা হচ্ছে খুশু। এমনকি নামাযি থাকবে, কিন্তু কারো অন্তরে খুশু থাকবেনা।” (মাযমাউজ জাওয়ায়েদ, হাঃ ২৮১৩)
অন্য রেওয়াতে আছে,
“তোমাদের দ্বীনের সর্বপ্রথম হারানো বস্তু হবে খুশু এবং সর্বশেষ বস্তু হবে নামায।” (মুসান্নাফে- আবু শাইবা, হাঃ ৩৫৯৫৪)
সংক্ষিপ্ত এই আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম, নামাযে খুশুর গুরুত্ব অপরাসীম। তাই আমাদের খুশু-খুযুর সাথে নামায আদায় করতে হবে তাহলে এই নামায আমাদেরকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে। ইনশাআল্লাহ ।
আর নামায না পরলে কি হবে এই বিষয়ে অল্প লিখলাম,
হযরাত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেন’
“যাহার এক ওয়াক্ত নামায ছুটিয়া গেল তাহার যেন ঘরবাড়ি, পরিবার-পরিজন ও মালদৌলাত সবই ছিনাইয়া নিয়া হইল”। (ইবনে হিব্বান, খন্ড- ৪, পৃ- ৩৩০)। এখন চিন্তা করুন ! আমরা এভাবে কত নামায বাদ দিয়েছি, আর কি পরিমাণ গুনা করেছি?
অন্য স্থানে আছে, “এক ওয়াক্ত নামায না পরলে ৮০ হুকবা জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে, আর কেউ যদি নামায কাযা করে তবে ১ হুকবা পরিমাণ্ জ্বলতে হবে। আর ১ হুকবা মানে হচ্ছে ২৮৮০০০০০ বছর।” ( দেখুন-মাজালিসুল আবরার)
[বিঃদ্রঃ- তার মানে হল নামায না পরলে (২৮৮০০০০০* ৮০) বছর জ্বলতে হবে]
তাই আর দেরি না করে নামায পড়ার জন্য চেষ্টা করি।
যেকোন বিষয় বিস্তারিত জানার জন্য প্রশ্ন পাঠিয়ে দিন আজই।
আমাদের দুনিয়াতে আসার উদ্দেশ্য কি ও আমাদের কি করা উচিত ? এ সম্পর্কে জানতে পড়ুন লেখকের সংকলিত “বর্তমান সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে মুহাম্মাদ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –এর আর্দশ” শিরোনামের পুস্তিকাটি। আশা করি, এতে আপনি বিস্তারিত তথ্য পাবেন।
No comments:
Post a Comment